ভারতে এখন থেকে পরকীয়া অপরাধ না

272

ভারতে এখন থেকে পরকীয়া অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে না। এমন রায়ই দিলেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। প্রায় ১৫৮ বছরের পুরনো আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়েছে, পরকীয়া (অডাল্টি) ডিভোর্সের একটি বড় কারণ হতে পারে, তা নিয়ে সংশয় নেই। তবে এটা কোনোভাবেই অপরাধ নয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, যে আইন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নারীদের সমানাধিকারের দাবিকে কোনোভাবে ক্ষুণ্ণ করে, তা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ছিলেন আর এফ নিরিমন, এ এম খানউইলকর, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও ইন্দু মালহোত্রা। আদালতে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেন, যদি কোনো পুরুষ কোনো বিবাহিত নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। তিনি আরও জানান, যে সব আইন ব্যক্তিগত মর্যাদায় আঘাত করে, নারীদের সমানাধিকারে বাধা দেয়, তা সাংবিধানিক হতে পারে না। রায়ে বলা হয়েছে, নারীদের এতদিন ‘পুরুষের সম্পত্তি’ বলে মনে করা হতো। নারীদের সমানাধিকারের দাবিকে যে আইন ক্ষুন্য করে তা অসাংবিধানিক। যদিও কেন্দ্র এই আইনটির বিরোধিতা করে বলেছিল, বিয়ের যে সনাতন রীতি, তাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য পরকীয়াকে অপরাধ বলে ঘোষণা করাটাই কাম্য। এই আইনে পুরুষ এবং নারীদের সমানভাবে দেখা হয় না বলে যে পিটিশনটি দাখিল করা হয়েছিল, তার বিরোধিতা করেই এই কথা বলেছিল কেন্দ্র। আগস্ট মাসে এই মামলার শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, পরকীয়া সামাজিকভাবে অপরাধ। এর ফলে ওই ব্যক্তির সঙ্গী, সন্তান ও পরিবারের উপর প্রভাব পড়ে। তাদের ক্ষতি হয়। ভারতীয় সমাজে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। সেটি কোনোভাবেই খণ্ডন করা উচিত নয়। তার উপর এমন আবেদনও জমা পড়েছিল, ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী পরকীয়ায় লিপ্ত হলে শুধু পুরুষেরই শাস্তি হবে। নারীদের কোনো শাস্তি হবে না। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ রায় দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। জানায়, ৪৯৭ ধারাটাই অবৈধ। যে কোনও সম্পর্ক ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে। পরকীয়াও তাই। এটি কোনও ফৌজদারি অপরাধ নয়। সমাজে নারী ও পুরুষের অধিকার সমান। ১৫৮ বছরের পুরনো একটি আইন আজকের যুগে বলবৎ করা যায় না। স্ত্রী কখনওই স্বামীর সম্পত্তি নয়। তাই স্বামী কখনওই স্ত্রীর উপর জোর খাটাতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন সুশীলরাও। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই এই রায়কে সমর্থন জানিয়েছেন।