ভবিষ্যতে কার লিটারে চলবে ১০০ কি.মি

524

এক লিটার তেলে ১০০ কিলোমিটার চলে, এমন গাড়ির স্বপ্ন অনেকদিনের ওদিকে গাড়িতে নিত্যনতুন আরামের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, লাগানো হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি। ফলে গাড়ির ওজন বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে তেল-খরচ। এই গোলকধাঁধা থেকে বের হয়ে আসার জন্য চাই সম্পূর্ণ নতুন ধরনের গাড়ি, যা হবে শুধুই গাড়ি, শুধুই পথ চলার বাহন, সহজ এবং ওজনে হালকা। জার্মানির ট্রিয়ার শহরের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্যপ্রযুক্তির ছাত্ররা বিকল্প, কম জ্বালানি খরচের ড্রাইভ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। তরুণ গবেষকদের সর্বাধুনিক প্রকল্প হলো : দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য একটি ইলেকট্রিক কার, যা এক লিটার পেট্রলের স¤পরিমাণ জ্বালানি খরচ করে ১০০ কিলোমিটার চলতে পারে। সত্যিকারের এক-লিটারে-একশো-কিলোমিটার গাড়ির প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে বটে, কিন্তু ট্রিয়ার অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হার্টম্টু সপকে সেই ধরনের একটি গাড়িকে সিরিজ প্রোডাকশনে নিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পদ্ধতির বিশেষত্ব হলো এই যে, আজকাল সব ধরনের কমফর্ট এবং রোড পারফর্মেন্স যুক্ত যে সব গাড়ি পাওয়া যায়, আমরা তার এক-লিটার সংস্করণ বানানোর চেষ্টা করছি না৷বরং আমরা একটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা দিয়ে শুরু করেছি: আমরা গাড়িটিকে কোনোরকম বাহুল্য ছাড়া শুধু তার আবশ্যক ও প্রয়োজনীয় অংশগুলি দিয়ে গড়ব।

সব ধরনের যাত্রার জন্য একই বাহন নয় :

ধারণাটির নতুনত্ব হলো এই যে, ভবিষ্যতের ইলেকট্রিক কার চলবে হয় দূর পথে, নয়তো শহরের ট্র্যাফিকে। এ সব কাজ একাই করতে পারে, এমন অল-রাউন্ডার গাড়ি আর তৈরি করা হবে না। অধ্যাপক সপকে বলেন, ‘‘সব কাজ ভালোভাবে করতে পারে এমন গাড়ি আর পাওয়া যাবে না। ও ধরনের সব-করিয়ে গাড়ির অর্থ হলো, সবচেয়ে বড়, ভারি এবং শক্তিশালী গাড়িটা নেওয়া। স্বভাবতই দূরপাল্লার জানির্র জন্য আমাদের এক ধরনের গাড়ি লাগবে, আবার নিকটপাল্লার দৌড় কিংবা শহরে চলাচলের জন্য আরেক ধরনের গাড়ি লাগবে। ভবিষ্যতের সেই গাড়ির একটা স্টাডি আর একটা স্কেলিটন বডিওয়ার্ক আছে মাত্র। ফোর-সিটার গাড়িটার ওজন ৪৫০ কিলোর বেশি হলে চলবে না। গাড়িটা সহজ এবং হালকা হতে হবে, কেননা যতো হালকা গাড়ি, ততোই সে গাড়িতে কম জ্বালানি খরচ হবে। ডেভেলপমেন্ট টিম সেজন্য এশিয়ার একটি স্ট্যান্ডার্ড মডেল ব্যবহার করছে। সপকে বলেন, ‘‘জ্বালানি খরচ কম করার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো গাড়ির ওজন কমানো, কেননা গাড়ির ড্রাইভিং রেসিস্ট্যান্সের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসে তার ওজন থেকে অন্তত শহরের ভিতরে গাড়ি-চলাচলে, যখন গাড়ি বিশেষ জোরে চলে না।

গাড়ির পক্ষেও ওজন কমানো দুরূহ ব্যাপার
ওজন কী ভাবে কমানো যায়, অধ্যাপক সপকে সেটা দেখালেন দু’টি গাড়ির সিটের মধ্যে তুলনা করে। তাদের মধ্যে একটি ভারি কিন্তু আরামদায়ক, অন্যটা হালকা এবং পুরোপুরি কর্মক্ষম, কিন্তু বিশেষ আরামদায়ক নয়। সপকে’র ভাষ্যে, ‘‘এ দুটো হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের সিট। প্রথমটা একটা উঁচু মানের গাড়ি থেকে, এটার ওজন ৩০-৪০ কিলোগ্রাম। আজ একটা গাড়ির সিটে যা কিছু পাওয়া যায়, তার সবই এটায় রয়েছে : এটার অ্যাঙ্গল অ্যাডজাস্ট করা যায়, এটা দিয়ে ম্যাসাজ করানো যায়, ভেন্টিলেশন, বাকি সব কিছু। অপরদিকে রয়েছে এই ন্যাচারাল ফাইবারের তৈরি সিট, যা অতি পাতলা করে তৈরি করা হয়েছে : গাড়ির ড্রাইভার যাতে ঠেস দিতে পারেন; অ্যাক্সিডেন্ট হলে যা ভাঙবে না, আর যাতে সিট বেল্ট লাগানো চলবে। এ সিট-টার ওজন দেড় কিলোগ্রাম। গাড়ির সিট এবং ভিতরের অন্যান্য অংশ ন্যাচারাল ফাইবার দিয়ে রিইনফোর্স করা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এই ন্যাচারাল ফাইবার হলো জুট, অর্থাৎ পাট, একটি রজনের সঙ্গে মিশিয়ে যা শক্ত করা হয়। এই নতুন, হালকা গাড়ির সিট কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সে ধাক্কাও সামলাতে পারে। ল্যাবরেটরি-তে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
তন্বী টায়ার
গাড়ির টায়ারেরও ওজন কমানো যায়। টায়ারগুলো সরু এবং পুরো পাম্প করা হওয়া চাই। তা সত্ত্বেও রোডহোল্ড ভালো থাকবে, সুন্দরভাবে রোল করবে এবং দীর্ঘকাল ধরে কাজ দেবে। সপকে ব্যাখ্যা করলেন, ‘‘আজকাল প্রাইভেট গাড়িতে সাধারণত ২০০ মিলিমিটার চওড়া টায়ার ব্যবহার করা হয়। এই ১০০ মিলিমিটার চওড়া টায়ারটার ক্রস সেকশন দেখলে খেয়াল করবেন যে, এই টায়ারের ট্রেড-এর প্রোফাইলটা খুব পাতলা, কাজেই গাড়ি চলার সময় তার ডিফর্মেশনও খুব কম হয়। ট্রিয়ারের অভিনব ফোরসিটার শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ চলবে, যেমন ১৫০ কিলোগ্রাম ওজনের ‘‘এয়ারিস’’ গাড়ি, যার দু’টি ইলেকট্রিক মোটর সামনের হুইল কেসে বসানো : এটাও জ্বালানি বাঁচানোর একটা উপায়, যা নতুন ফোরসিটারটায় কাজে লাগানো হতে পারে।