বিশ্বমঞ্চে ‘বাংলার রানি’ মিথিলা

একসময় বাংলার অভিজাত শ্রেণির জন্য বোনা হতো জামদানি শাড়ি, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহন করে চলেছে একই শিল্পরীতি, সৌন্দর্যবোধ আর সাংস্কৃতিক গৌরবের নিদর্শন। বাংলার প্রাচীন তাঁতশিল্প থেকে উঠে আসা এই ন্যাশনাল কস্টিউম একটি হাতে বোনা জামদানি শাড়ি। এতে মিশে আছে ঐতিহ্য, সৌন্দর্য আর দৃঢ়তার গল্প। এর শিকড় সতের শতকের মোগল আমলে, যখন জামদানি ছিল রানি, নবাব পরিবারের নারী ও অভিজাতমহলের বিলাসী আর রুচির প্রতীক। সূক্ষ্ম সুতায় বোনা এই শাড়ির প্রতিটি সুতা তৈরি হয়েছে বাছাই করা তুলা থেকে। যে সুতার ওপরে ফুটে উঠেছে সোনালি জরির কারুকাজ। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা তীরের দক্ষ তাঁতিদের হাতে এসব নকশা নতুন জীবন পেয়েছে।

২০১৩ সালে ইউনেসকো জামদানিকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর শিল্পগুণ ও ঐতিহ্যের প্রতি বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধার প্রমাণ এটি। মিথিলার পুরো শাড়িতে ফুটে উঠেছে শাপলার মোটিফ। এই মোটিফ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে মিথিলা বলেন, “শাপলা এই মাটির শান্তি, পবিত্রতা ও অপরাজেয় মনোভাবের প্রতীক। এই বিশেষ জামদানি শাড়িটি পুরোপুরি হাতে তৈরি করা, বানাতে সময় লেগেছে প্রায় ১২০ দিন। শাড়িটির ডিজাইন করেছেন আফরিনা সাদিয়া সৈয়দা।”

জামদানি শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিয়েছেন ব্লাউজ ও গহনা; যা বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। পুরো সেটটি তৈরি করেছে সিক্স ইয়ার্ড স্টোরি। গহনার পুরো সেটটি বানাতে ১২ জন কারিগরের সময় লেগেছে আড়াই মাস। মিথিলা চেয়েছিলেন সাদা জামদানির সঙ্গে পুরো গহনায় থাকবে সোনালি লুক। এ কারণে ২২ ক্যারেট সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ গহনায়। টিকলি, চোকার, ঝুমকা, বালা, মোটা চূড়া, রতনচূড়, বাজু, বিছা, চাবির গোছা, আঁচলের ওপর বসানো গহনার সবকিছুতেই শাপলার থিম রয়েছে। গলার হারের ঝুলে থাকা সবুজ পাথরগুলো শাপলা পাতার রং থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে।

মিথিলাকে এমন সাজপোশাকে দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা। শফিকুল আলম বাবু লেখেন, “মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।” ওপার বাংলার আদিত্রী লেখেন, “মা সরস্বতীর লুকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা। পদ্মফুলের সঙ্গে মা লক্ষ্মীর আভা বজায় রাখা। তাহলে আপনি কি উভয় বাংলার প্রতিনিধিত্ব করছেন?” সৈয়দা মরিয়ম সিরাত লেখেন, “এটা কীভাবে সম্ভব! আমি একমাস আগে অনেক পোস্টে মন্তব্য করেছিলাম, ‘মিথিলা আপুর মধ্যে ‘ওয়াটার লিলির’ মতো আভা আছে। সরল, নরম, মার্জিত অথচ সুন্দর।” এমন অসংখ্য মন্তব্য শোভা পাচ্ছে কমেন্ট বক্সে।