বিশ্বকাপে সাফল্যের রহস্য জানালেন শামি!

67

বিশ্বকাপে শুরুর কয়েক ম্যাচে একাদশেই জায়গা পাননি মোহাম্মদ শামি। এর আগে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স এবং নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ মিলিয়ে ভারতীয় এই পেসার কী বিভীষিকাময় সময়ই না পার করেছিলেন! সেখান থেকেই হয়তো মাঠের পারফরম্যান্সে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নেন শামি। এরপর বিশ্বকাপের ৬টি ম্যাচেই নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট। মুম্বাইয়ের ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটেও সেমিফাইনালের মতো মঞ্চে তিনি একে একে ৭ উইকেট নিয়েছেন। কীভাবে এমন সাফল্যময় সময় ফিরিয়ে আনলেন, সেই রহস্য জানিয়েছেন শামি। সর্বশেষ গতকাল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে প্রতিশোধরাঙা একটি লড়াইয়ে জিতল ভারত। আগে ব্যাট করে বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের সেঞ্চুরিতে রোহিত শর্মার দল ৩৯৭ রান সংগ্রহ করে। এমন রানপাহাড় ছোঁয়াও কিউইদের ব্যাটিংয়ের একপর্যায়ে সম্ভব মনে হয়েছিল। সেখান থেকে বাকি গল্পটা লিখতে শুরু করেন শামি। ৯.৫ ওভার বল করে ৫৭ রানের বিনিময়ে তিনি একাই তুলে নেন ৭টি উইকেট। এটি চলতি বিশ্বকাপের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স তো বটেই, এমনকি বিশ্বকাপের পুরো ইতিহাসে কোনো নক-আউট ম্যাচে ৭ উইকেট নিতে পারেননি আর কেউ। এ নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে তিনবার পাঁচ উইকেট নিলেন ভারতীয় এই ৩৩ বছর বয়সী পেসার। আরেকটি ইনিংসেও ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকায় নিজেকে আগেই বসিয়েছিলেন শামি। জহির খান আর জাভাগাল শ্রীনাথের সঙ্গে তিনি ৪৪ উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা বোলারের তালিকাটা ভাগাভাগি করছিলেন। তবে গতকালের ৭ উইকেট তাকে পার করিয়েছে বিশ্বকাপের ৫০ উইকেটের মাইলফলক। এই কীর্তি গড়তে তিনি খেলেছেন মাত্র ১৭টি বিশ্বকাপ ইনিংস। নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বজয়ী হওয়া থেকে আর মাত্র এক ম্যাচ দূরে ভারত। এমন সাফল্যের অন্যতম নায়ক শামি প্রশংসার বন্যায় ভাসছেন। অথচ বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে সুযোগই পেলেন না তিনি। এ নিয়ে অবশ্য তেমন একটা আক্ষেপ শোনা যায়নি শামির গলায়। শামি স্পষ্ট জানান যে, তিনি শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। একবার সুযোগ পেতেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এরপরই আসে এমন চমকপ্রদ পারফরম্যান্সের রহস্যের কথা, ‘সবাই ভেরিয়েশনের কথা বলে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাউন্সার, ইয়র্কার ও স্লোয়ারসহ বেশ বৈচিত্র্যের দরকার বলে মনে করে অনেকে। তবে আমি এখনও বিশ্বাস করি যে, সঠিক জায়গায় বল রাখাটাই উইকেট নেওয়ার মূল মন্ত্র। বিশেষ করে নতুন বলে ওপরের দিকে বল রেখে উইকেট তোলার দিকে আমার নজর থাকে। সেভাবেই সাফল্য এসেছে।’

বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপেও শামি একাদশে জায়গা পাননি নিয়মিত। তেমনি আইসিসির মেগা আসরটিতে তার সুযোগ মেলে নাটকীয়ভাবে। চোটের কারণে হার্দিক পান্ডিয়া ছিটকে যাওয়া ও শার্দূল ঠাকুরের বাজে পারফরম্যান্স তার দরজা খুলে দেয়। এ নিয়ে ভারতীয় ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর বলেছেন, ‘শামি বিশেষ বোলার এবং সে আসলেই দুর্দান্ত বোলিং করেছে। টিম কম্বিনেশনের জন্য তাকে একাদশে আনাটাও আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মাঠের বাইরে থাকাবস্থাতেও মহৎ মনের পরিচয় দিয়েছে।’ শামির শৈশবের কোচ মোহাম্মদ বদরুদ্দিনও কথা বলেছেন শিষ্যের সাফল্য নিয়ে। কিভাবে ভারতীয় পেসার নিজের দক্ষতা অর্জন করেছেন তা নিয়ে তার গুরু বলেন, ‘তার (শামি) মাঝে সহজাত কিছু প্রতিভা আগে থেকেই আছে, বাকিটা সে অনেক পরিশ্রমে আয়ত্ত করেছে। যা সাফল্যের মঞ্চে তুলে দিয়েছে তাকে। তার ডেলিভারি সবসময় অনেকটা ওপরে থাকে এবং বলও ছোড়া হয় পারফেক্ট অবস্থান থেকে। দারুণ গতির মিশেলে সে অধিকাংশ বলই একই স্লটে ছাড়ে। সে কারণে কোন বলটি ভেতরে আসবে আর কোনটা বাইরে বেরিয়ে যাবে সেটি ব্যাটসম্যানদের বোঝা অনেক কঠিন।’