বিশেষ নিবন্ধ : কাঁচা আম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

193

ড. মো. কামরুল ইসলাম

আম বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু ফল। আমকে ফলের রাজা বলা হয়ে থাকে। কারণ স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমান ও বহুবিধ ব্যবহারের জন্য ফলের জগতে আম তুলনাহীন। পাকা আমের মধুর রস যেমন আমাদের তৃপ্তি দেয় তেমনি কাঁচা আমের স্বাদ-গন্ধ জিবে জল আনে।
এখন সময়টা কাঁচা আমের। আমাদের দেশে আমের অনেক জাত রয়েছে। এদের বেশিরভাগই জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে বা আষাঢ় মাসে পেকে থাকে। তার আগে ঝড়-বাতাসে অনেক আম ঝরে পড়ে। গুটি আসার পর হতে নানা কারণে প্রায় ৯৯ ভাগ আম ঝরে পড়ে। আবার অতিরিক্ত আম ধরলে গাছের সঞ্চিত খাদ্য শেষ হয়ে যায়। ফলে পরবর্তী বছর ফুল-ফল ধরে না। তাই ছড়ার অতিরিক্ত আমগুলো তুলে পাতলা করে দিতে হয়। এই ঝরে পড়া বা তুলে ফেলা আম সংরক্ষণ করে অনেক দিন আমরা এর স্বাদ নিতে পারি। কাঁচা আম দুইভাবে সংরক্ষণ করা যায়Ñ একটি হলো সরাসরি কাঁচা অবস্থায়, অন্যটি হলো আচার, চাটনি এসব বানিয়ে বা প্রক্রিয়াজাত করে।
কাঁচা সংরক্ষণের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ৮০ গ্রাম খাবার লবণ, ২ চা চামচ এসিটিক এসিড ও ১ চা চামচের আট ভাগের এক ভাগ পটাসিয়াম মেটা বাই সালফেট গুলে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। আস্ত কাঁচা আম পানিতে ধুয়ে নিয়ে পরিষ্কার ড্রাম বা বয়ামে ভরতে হবে। এরপর তৈরি দ্রবণ ড্রামে এমনভাবে ঢালতে হবে যাতে আম ডুবে থাকে। এবার ঢাকনা লাগিয়ে টেপ মুড়ে দিলে ৯ হতে ১২ মাস সংরক্ষণ করা যায়। তবে খাবার আগে পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। আবার শুধু লবণ পানিতেও কাঁচা আম সংরক্ষণ করা যায়। সেক্ষেত্রে খোসা ছাড়ানো আম চার টুকরো করে নিতে হবে। টুকরোগুলো ফুটন্ত পানিতে ২-৩ মিনিট ডুবিয়ে ছেকে তুলে নিতে হবে। এরপর বয়ামে লবণ গোলানো পানিতে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।।
কাঁচা আম নানাভাবে প্রক্রিয়াজাত করেও সংরক্ষণ করা যায়। যেমনÑ কাঁচা আমের মোরব্বা, আমঝুরি আচার, আম-মরিচের ঝুরি, আমের ঝাল আচার, কাশ্মীরী আচার, আম-পেঁয়াজের আচার, আম-গুড়ের আচার, আম-তেলের আচার, আম-রসুনের আচার, আম-রসুনের চাটনি, আমের জেলি এসব। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আমঝুরি আচার। এর জন্য খোসা ছাড়িয়ে আম ঝুরি করে নিতে হবে। ডুবো পানিতে ঝুরি আম ধুয়ে পরিষ্কার শুকনো কাপড়ে নিয়ে পানি নিংড়ে ফেলতে হবে। তারপর লবণ, চিনি, সিরকা, আদাকুচি, শুকনা মরিচ কুচি এবং সরিষার তেল মাখিয়ে পরিষ্কার বোতলে রাখলে ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। এর মধ্যে পাঁচফোড়নও দেয়া যেতে পারে।
কাঁচা আমের আঁটি যখন বেশ শক্ত হয় তখন সে আমের কাশ্মীরী আচার ভালো হয়। কাশ্মীরী আচার করতে হলে আম ছিলে টুকরো করে কেটে লবণ মাখিয়ে রাখতে হবে। পানি বের হলে পানি ফেলে দিয়ে ভালো পানিতে আবার ধুয়ে নিতে হবে। এরপর টুকরোগুলো চিনি, ভিনেগার, শুকনো মরিচ টুকরো ও আদাবাটা দিয়ে জাল দিতে হবে। ১৫-২০ মিনিট পর ঘন হয়ে এলে নামাতে হবে। ঘন চিনির সিরায় কাশ্মীরী আচার ভালো থাকে। খেতেও মজা হয়। চিনি কম হলে নষ্ট হয়ে যায়।
আবার মসলা তেলে ভেজে আম কষিয়ে সিদ্ধ করে টক-ঝাল-মিষ্টি আচার তৈরি করা যায়। এ আচারও অনেকদিন ভালো থাকে, তবে তেলে ডুবানো থাকতে হবে এবং মাঝে মাঝে বয়ামের মুখ খুলে রোদে দিতে হবে।
কাঁচা আমের জেলিও তৈরি করা যায়। এক কেজি পরিমাণ আম খোসা ও আঁটি ছাড়িয়ে চিকন ফালি ফালি করে কাটতে হবে। এক রাত চুনের পানিতে ডুবিয়ে রেখে ছেঁকে তুলতে হবে। তারপর ফিটকিরির পানিতে ধুয়ে নিলে কষ্টি স্বাদ দূর হবে। এবার আম ফালিগুলো শিলপাটায় মিহি করে বেটে নিতে হবে। একটি পাতলা কাপড় দিয়ে রসটুকু ছেকে নিয়ে চিনি মিশিয়ে জালে চাপাতে হবে। রস ফুটে ঘন হয়ে এলে কয়েক ফোটা টারটারিক এসিড মিশিয়ে নামাতে হবে। তারপর ঠা-া করে বয়ামে রাখলে অনেকদিন ভালো থাকে। টারটারিক এসিডের পরিবর্তে সোডিয়াম বেনজোয়েট ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো বেশিদিন সংরক্ষরণে সহায়তা করে।

ড. মো. কামরুল ইসলাম : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ