বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছেলেরা

380

পৃথিবীতে মানুষের হাজার হাজার রোগ-বালাই থাকলেও কিছু কিছু রোগ আছে যাতে শুধু ছেলে বাচ্চারাই ভোগে। এসব রোগকে এক্স লিংকড (X- Linked) ডিজিজ বলে। যেহেতু ছেলেদের একটি মাত্র এক্স ক্রোমোজম ও একটি ওয়াই ক্রোমোজম থাকে তাই ছেলেরাই এই রোগে ভোগে। মেয়েদের দুটি এক্স ক্রোমোজম থাকে যার মধ্যে একটি সাধারণত ভালো থাকে তাই মেয়েরা এসব রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু রোগে ভোগে না। এরকম রোগগুলোর মধ্যে নিম্নের কয়েকটি আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।
হিমোফিলিয়া (Hemophilia): এটি একটি জন্মগত রক্তরোগ যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত জমাট বাঁধার বিশেষ উপাদান থাকে না। ফলে শরীরের কোনো অংশে আঘাত পেলে আর রক্তক্ষরণ বন্ধ হতে পারে না। আঘাত ছাড়াও এদের হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্ট, যেমন হাঁটু, কনুই, গোড়ালি ইত্যাদির ভিতরেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। ফ্র্যাজাইল এক্স সিনড্রোম (Fragile X Szndrome): এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা মারাত্মক মানসিক বৈকল্যে ভুগে থাকে। যেমন লেখাপড়া শিখতে না পারা, অমনোযোগী, অতি সক্রিয়তা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে নড়াচড়া করতে না পারা ইত্যাদি। অটিজমের সঙ্গে এ রোগটির অনেক মিল রয়েছে। বিরল ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুরাও এ রোগে ভুগতে পারে।
ডিএমডি : ডুসিন মাসকুলার ডেসট্রফি (Duchenne Muscular Dystrophy): দুই থেকে পাঁচ বছর বয়স হলে এ রোগটি ধরা পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের ধীরে ধীরে মাংসপেশিগুলো শুকিয়ে যায়। শিশুরা দেরিতে দাঁড়াতে, হাঁটতে শেখে। মাংসপেশিতে কোনো বল থাকে না বলে তারা দিন দিন হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলে। সাত থেকে বারো বছরের মধ্যে তারা সাধারণত হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলে। মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাংসপেশিগুলো আর কাজ করে না।
প্রতিরোধের উপায় : যেহেতু এই রোগগুলো জেনেটিক বা ডিএনএ ঘটিত তাই এসব রোগের চিকিৎসা নেই বা থাকলেও অত্যন্ত জটিল। যেহেতু ছেলে বাচ্চাদের এসব রোগে ভোগার সম্ভাবনা বেশি তাই প্রথমেই জানা জরুরি মায়ের গর্ভের বাচ্চাটি ছেলে না মেয়ে। সাধারণত গর্ভাবস্থার আঠারো হতে বিশ সপ্তাহে আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ছেলে-মেয়ে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু তখন বাচ্চার আকার প্রায় দশ ইঞ্চির মতো হয়ে যায়। বর্তমানে মাত্র এগারো হতে পনেরো সপ্তাহে অর্থাৎ বাচ্চার আকার যখন মাত্র দেড়-দুই ইঞ্চি তখনই প্রাথমিক গর্ভফুল হতে কোষ কলা সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে বাচ্চার লিঙ্গ জানা যায়। যদি জানা যায় যে গর্ভের সন্তানটি মেয়ে তাহলে আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। কিন্তু যদি দেখা যায় গর্ভের সন্তানটি ছেলে তাহলে পরবর্তী কাজ হলো বাচ্চাটির উপরোক্ত জেনেটিক রোগটি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। রিপোর্টে যদি দেখা যায় ছেলে বাচ্চাটি উক্ত রোগগুলোর কোনো একটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে যাচ্ছে তখন বাচ্চার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন গর্ভাবস্থা চালিয়ে যাবেন কিনা। এভাবেই উন্নত বিশ্বে জেনেটিক রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।