বিপিসির বিপুল মুনাফা জমা হচ্ছে না সরকারি কোষাগারে

258

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ধারাবাহিকভাবে বিগত ৩ বছর ধরে বিপুল মুনাফা করছে। আমদানি মূল্যেও চেয়ে বেশি দামে জ্বালানি তেল বিক্রির মাধ্যমে ওই মুনাফা করছে বিপিসি। কিন্তু মুনাফার ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ওই সংস্থাটি। গত তিন অর্থবছওে বিপিসি ২১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করলেও তা থেকে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে মাত্র ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে তেল বিক্রি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিপিসি ৭ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। তাছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৭ লাখ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে সংস্থাটি। বিপুল পরিমাণ মুনাফা হলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে কোনো অর্থই জমা দেয়নি বিপিসি। তার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (৪ মে ২০১৭ পর্যন্ত) ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে সংস্থাটি লভ্যাংশ হিসেবে জমা দিয়েছে। অথচ বিগত সময়ে লোকসানে থাকা বিপিসিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছিল। তার আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা সরকারি ভর্তুকি পায় সংস্থাটি।
সূত্র জানায়, বিপিসি হচ্ছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যারা বিভিন্ন ধরনের অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত তেল আমদানির মাধ্যমে নিজস্ব পরিশোধনাগারে পরিশোধন করে। পরিশোধিত জ্বালানি তেল রাষ্ট্রীয় বিতরণ কোম্পানির মাধ্যমে সারাদেশে বিপণন করে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লোকসানে থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে মুনাফায় সংস্থাটি। ১৯৭৭ সালের ১ জানুয়ারি পেট্রোবাংলা থেকে আলাদা হওয়ার পর ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে লভ্যাংশ থেকে ২৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছিল বিপিসি। তার ৩ বছর পর ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে জমা দেয় ৩ কোটি টাকা। এরশাদের শাসনামলে টানা ৬ অর্থবছর বিপিসি থেকে মুনাফার অর্থ পায় সরকার। তারপর ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে ৮০ কোটি টাকা মুনাফা দেয় বিপিসি। পরের টানা ১৬টি অর্থবছরে সরকার বিপিসি থেকে কোনো লভ্যাংশ পায়নি। বরং লোকসান ও ব্যাংকঋণে জর্জরিত বিপিসিকে ভর্তুকি দিয়েই টিকিয়ে রাখতে হয়েছে।
এদিকে মুনাফার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়া প্রসঙ্গে বিপিসির পরিচালক (পরিচালন ও উন্নয়ন) সৈয়দ মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক জানান, গত কয়েক বছর মুনাফা করলেও সরকারি কোষাগারে সে তুলনায় অর্থ জমা দেয়া হয়নি। তবে মুনাফার অর্থ ঋণ পরিশোধসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। তাছাড়া জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২) নিজস্ব অর্থায়নেই বাস্তবায়ন করছে বিপিসি। পাইপলাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজও বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নেই করা হচ্ছে। অনেক সময় সরকারের কাছ থেকে জরুরি প্রয়োজনে অর্থ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যদি প্রতিষ্ঠানের হাতে অর্থ থাকে তাহলে দ্রুত প্রয়োজন মেটানো যায়।