বিদেশে মাছ রপ্তানিতে আয় কমছে

315

বাংলাদেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয় কমার সাথে সাথে গত কয়েকবছর ধরে অব্যাহতভাবে কমছে মাছ রপ্তানি আয়। এবছর হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি আয় ৩ দশমিক ১০ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে, চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি খাতে আয় হয় ৩৫ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ইউএস ডলার (২ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা)। এর মধ্যে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই এ খাতে আয় হয় দুই কোটি ৮৮ লাখ ডলার বা ২২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া শুধু চিংড়ি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩০ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার (২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা), যা এ সময়ের হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি আয়ের ৮৫.৪১ শতাংশ। সূত্র জানায়, চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানিতে দুরবস্থা কয়েকবছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। গত অর্থবছরের (২০১৫-১৬) প্রথম তিন মাসে তার আগের অর্থবছরের (২০১৪-১৫) একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় কমে ৩৭ শতাংশ। বিগত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয় ৯৩৮ কোটি টাকা। অথচ তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এ সময়ে মাছ রপ্তানি কমে ৫৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জীবিত মাছ রপ্তানি কমে ৯৯ শতাংশের বেশি। এসময় সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হওয়া চিংড়িতেও বিপর্যয় নামে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চিংড়ি রপ্তানি কমে প্রায় ৩৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মাছ রপ্তানিতে আয় হয় ৪ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছওে (২০১৩-১৪) আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে শুধু মাছ রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে মাছ রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে মাছ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার থাকলেও আয় হয় মাত্র ২ লাখ ৯০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৯ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে চিংড়ির বাইরে ৬০ শতাংশ মিঠা পানি এবং ৪০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। মিঠা পানির মাছের মধ্যে রয়েছে কাচকি, মলা, ঢেলা, পুঁটি, খলসে, টাকি, গুতুম, বাইন, পাবদা, শৈল, বোয়াল, আইড়, চিতল ইত্যাদি। অন্যদিকে সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে চিংড়ি, ইলিশ, রূপচাঁন্দা, মায়া, পাতা, কামিলা, লালপোয়া, সাদাপোয়া, ছুরি, চৈখ্যা, স্কুইড, দাতিনা কোরাল ইত্যাদি। এ ছাড়া অপ্রচলিত ও উচ্ছিষ্ট সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে টাং ফিশ, ছবি মাছ, রানি মাছ, ক্যাটল ফিশসহ নানা জাতীয় মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৫৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মৎস্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এর বিপরীতে এ সময়ে আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.৭৫ শতাংশ বেশি। তবে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের তুলনায় এবার এ খাতের বৈদেশিক মুদ্রার আয় ৩.৮৯ শতাংশ কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩৭ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে জীবিত মাছ রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৫ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩২ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা এই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০.৬২ শতাংশ কম। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতের রপ্তানি আয় ৪৩.৮৮ শতাংশ কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এ খাতের আয় হয়েছিল ৫৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছিল তিন কোটি ৫৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতের পণ্য রপ্তানিতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন কোটি ১২ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে দুই কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪.০১ শতাংশ কম বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে এ খাতে। একই সঙ্গে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়ও এ খাতের আয় ১৬.১৩ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে চিংড়ি রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৯ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩০ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪.৪৯ শতাংশ বেশি। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতের আয় ১.৫৫ শতাংশ কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে চিংড়ি রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩১ কোটি পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ডলার। চিংড়ি রপ্তানিকারকরা জানান, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া হিমায়িত মাছের ৪৮ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত চারটি দেশে। দেশগুলো হলো জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম। এর মধ্যে ১৭ শতাংশ রপ্তানি হয় বেলজিয়ামে। যুক্তরাজ্যে যায় ১৩ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ১০ শতাংশ এবং জার্মানিতে যায় আরো ৮ শতাংশ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বেলজিয়াম বাংলাদেশি হিমায়িত মাছ আমদানির প্রধান ক্রেতা। এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে কাঁকড়া রপ্তানিতে আয় হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে কাঁকড়া রপ্তানিতে আয় হয়েছিল এক কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার।