বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে

আমাদের সমাজে এখনো মায়েরা ছেলে সন্তানকে বেশি প্রাধান্য দেন উল্লেখ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেছেন, বাল্যবিয়ের কারণে একজন কন্যাসন্তানের সব স্বপ্নকে ভ্রূণেই হত্যা করা হচ্ছে। তার শিক্ষা-দীক্ষা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরসহ তার অংশীদার অন্যান্য দপ্তরগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে দরিদ্র মা-বাবাকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বোঝাতে হবে, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাল্যবিয়ে রোধে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রচারপত্র বিতরণ করতে হবে। জুম্মার নামাজে খুৎবায় এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে আমাদের কন্যাসন্তানদের রক্ষা করতে হবে।
বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাল্যবিয়ে নিরোধ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথাগুলো বলেন।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং ইউএনএফপিএ’র যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন অ্যাকসিলারেটিং অ্যাকশন টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারিজ ইন বাংলাদেশ ফেজ-২ প্রকল্পের আওতায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
যুগ্ম সচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী আরো বলেন— যারা অবৈধভাবে এফিডেভিটের নামে ছেলেমেয়েদের বয়স কমবেশি করেন তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন— ইমামদের জন্য অনলাইনে ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। সেখানে সকল ইমামের তথ্য থাকবে, কারা বাল্যবিয়ে পড়ান তাদের চিহ্নিত করা হবে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. আফাজ উদ্দিন, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক উজ্জ্বল কুমার ঘোষ, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. সুলতানা পাপিয়া, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ’র প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট মো. আবু নাসের, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সূচনা বক্তব্য দেন— জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপরিচালক সাহিদা আখতার। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন— চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. বিপ্লব কুমার মজুমদার, জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল ওদুদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা, জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পেশ ইমাম মাওলানা মুখতার আলী, জেলা কাজী সমিতির সভাপতি সভাপতি কাজী সেতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল বারীসহ আরো অনেকে। জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এই কর্মশালার আয়োজন করে। কারিগরি সহযোগিতায় ছিল জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ, বাংলাদেশ। কর্মশালায় বাল্যবিয়ের কারণ, প্রতিরোধে করণীয়, আইন, তালাক, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও মৃত্যুসহ বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।