বাণিজ্য ঘাটতি পাঁচ মাসেই ৭.৬ বিলিয়ন ডলার

404

আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েই চলেছে; চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসেই এ ঘাটতি ৭৬০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ মোট দুই হাজার ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে। এই সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে এক হাজার ৪৩৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এই হিসাবে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৮৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর পুরো অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে; ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার। এই তিন বছর ছাড়া সব বছরেই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসের চেয়ে কম। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই পাঁচ মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে অনেক খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ব বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেও ব্যয় বেড়েছে। গতবছর বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাল আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় রপ্তানি আয় না বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে বলে মনে করেন ফরাসউদ্দিন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-নভেম্বর সময়ে খাদ্য (চাল ও গম) আমদানি বেড়েছে ২৫৭ শতাংশ। শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে ৪০ শতাংশের মত। জ¦ালানি তেলের আমদানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। আর শিল্পের কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু দেখছেন না সাবেক এই গভর্নর। তিনি বলেন, “আমদানি বাড়ার ইতিবাচক দিক হচ্ছে বিনিয়োগ বাড়া। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমদানি বাড়ার মাধ্যমে তা আরও অগ্রসর হবে।”
সেবা খাতে ঘাটতি ১.৮৫ বিলয়ন ডলার
ঘাটতি বেড়েছে সেবা খাতেও। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে ঘাটতি ছিল ১৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য পরিমাপ করা হয়।
লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ৪.৪৩ বিলিয়ন ডলার
আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-নভেম্বর সময়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪৩ কোটি ২০ লাখ (৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলারে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাত এবং পুরো বছরের চেয়ে চার গুণ বেশি। বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষ করেছিল ১৪৮ কোটি ডলারের ঘাটতি নিয়ে। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লেনদেন ভারসাম্যে ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

এফডিআই কমেছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়ে মোট ১৩৮ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ৮৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের বছরের এই পাঁচ মাসে এসেছিল ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে মোট যে এফডিআই আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকেই নিট এফডিআই বলা হয়।