বরফের তৈরি ঘরে বসবাস করে এস্কিমো বা ইনুইট নামের মানুষেরা।

371
যতদূর চোখ যায় শুধু শুভ্র বরফ। ঘরগুলোও বরফের। এমন বরফের দেশেই বসবাস করেন এস্কিমো বা ইনুইট নামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব সাইবেরিয়া অঞ্চলে তাদের বসবাস। তাদের এস্কিমো বলা হলেও আঞ্চলিক ভাষায় তারা নিজেদের ইনুইট, ইনুপিয়াট, ইউপিক বা অ্যালুটিট নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। এইগুলোর অর্থ হলো মানুষ বা প্রকৃত মানুষ। মূলত ইউরোপিয়ানরা তাদের অনেক প্রাচীনকালে এস্কিমো বলে সম্বোধন করত। ধারণা করা হয়, এর অর্থ কাঁচা মাংস খেকো। তবে এখনো তাদের অনেকেই এই নামে ডাকে। আবার অনেক জায়গা থেকে এস্কিমো নামের চল উঠে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নথিতে এখন তাদের লেখা হয় “আলাস্কা নেটিভ।” বরফের তৈরি ঘরে এস্কিমোরা বসবাস করে। এই ঘরের নাম হলো ইগলু। অনেকে পশুর চামড়ার তাঁবু বানিয়েও সেখানে বসবাস করে। পোশাকের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় পশুর পশম। এক ধরণের বলগা হরিণের পশম দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করে তারা। এ পোশাক তাদের চরম ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষা করে। বরফ ঘেরা দেশে বসবাস বলে তাদের জীবনযাপনে রয়েছে অনেক বৈচিত্র্য। সংস্কৃতিতেও এস্কিমো জাতির রয়েছে নিজস্বতা। বরফে আবৃত বলে গাছ সেখানে দুর্লভ। শাকসবজির চাষও সম্ভব নয়। এস্কিমোদের তাই প্রধান খাদ্য মাছ। সিল এবং তিমি মাছ খেয়ে থাকে তারা। হারপুণ বা কোচ জাতীয় অস্ত্র দিয়ে সিল মাছ শিকার করে তারা। উমিয়াক নামের বড় আকারের নৌকা দিয়ে তারা যায় তিমি মাছ শিকারে। ভারী বস্তু বোঝাইয়ের জন্য তাদের যানবাহন হলো কুকুরের টানা গাড়ি। ছোটো ছোটো দল গঠন করে বাস করে তারা। সেই দলে একজন নেতা থাকেন। প্রথাগত এস্কিমো সমাজে পুরুষেরা ঘর তৈরি ও শিকারের কাজ করেন। নারীরা ঘরের ভেতরের কাজ করেন। সময়ের সাথে অনেকটাই বদলে গিয়েছে এস্কিমোদের জীবন। কুকুরের টানা গাড়ির জায়গায় এখন দেখা যায় স্নো মোবাইল নামের এক যানবাহন। শিকারের ক্ষেত্রে হারপুণ ব্যবহার না করে অনেকেই ব্যবহার করেন বন্দুক। এছাড়া সময়ের সাথে সাথে আরো অনেক কিছুরই প্রবেশ ঘটেছে তাদের জীবনে। এখন অনেকেই যাযাবর শিকারী জীবন ছেড়ে বসবাস করছেন কোনো শহরে। অন্যান্যদের মতো তারাও জড়াচ্ছেন নানান পেশায়।