বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল

229

দেশে বন্যার আশঙ্কা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। ইতিমধ্যে পানিতে ভাসছে দেশ। গত কয়েকদিনের বন্যায় সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হেক্টর ফসল তলিয়ে গেছে। তাতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে কৃষকরা। তবে সারাদেশের কৃষকের কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখনো জানে না কৃষি মন্ত্রণালয়। গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দুর্যোগ ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে কৃষকরা। অকাল বন্যায় ক্ষেতের ফসল হারিয়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম জেলা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ এবং কক্সবাজার জেলা বন্যার পানির নিচে। ঝড়-বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। সিলেট বিভাগের চার জেলায় এখ নপর্যন্ত ১ লাখ ৬১ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সিলেট কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯১ হাজার হেক্টর রয়েছে সুনামগঞ্জে। সিলেটে ৫৮ হাজার হেক্টর, মৌলভীবাজারে ১০ হাজার ৫৮, হবিগঞ্জে আড়াই হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তাছাড়া কুড়িগ্রামে উলিপুর, উপজেলার হাতিয়া বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই, দলদলিয়া, রাজাহাট, যাত্রাবাড়ি এলাকায় প্রায় একশ হেষ্টের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক জেলায় হাজার হাজার হেষ্টর জমির ফসল পানি নিচে রয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে জানা গেছে। ভুক্তভোগী ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত কয়েকদিনে বন্যায় ৫ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবেছে। বিশেষ কওে তাতে শাক-সবজী ও বেগুন, মরিচ বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কৃষকের কী পরিমাণ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তথ্য আসেনি কৃষি মন্ত্রণালয়ে। এখন পর্যন্ত মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া, সোনাদিঘি, কাওয়াদিঘির হাওর ও কইরকোনা বিলসহ বিভিন্ন স্থানে ১৪ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হবিগঞ্জ জেলার ৭ উপজেলার ১০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র কোলায় চরাঞ্চলের চাষীরা স্থানীয় জাতের বোর ধান চাষ করে। কিন্তু ভারী বর্ষণে রোপণকৃত চারাগুলো তলিয়ে যায়। তাছাড়া বন্যার কারণে শুকনো মরিচ ও ভুট্টা শুকানো যাচ্ছে না। শুকনো মরিচ ও ভুট্টা ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মরিচ ও ভুট্টা বিক্রি করতে না পেরে চিন্তিত কৃষকরা। নেত্রকোনা ও কেন্দুয়া জেলার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা, মদনসহ বিভিন্ন উপজেলায় নতুন করে তলিয়ে যাচ্ছে বিল ও হাওরের ফসলি জমি। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। তাতে ১৮ হাজারের অধিক হেক্টর জমির ধানের তলিয়ে গেছে। তবে বেসরকারি হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ৪টি গ্রামের প্রায় দুই হাজার বিঘা জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, সিলেট জেলায় সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জের ৫৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর হাওরপাড়ের কৃষকরা নতুন করে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও মূল্যবৃদ্ধিতে। ওসব জেলার বাজারগুলোতে সব ধরনের পণ্যেও মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। চাল, ডাল, আটা, আলু প্রতি বস্তা ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম বেড়েছে শাকসবজিরও। প্রতিকেজি তরকারি ৪-৫ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের হাট-বাজারে তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে। যদিও স্থানীয় প্রশাসন মজুতদারদের অতিরিক্ত মুনাফা রোধে মাঠে নেমেছে। যেসব এলকা বন্যার পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে সেগুলো হচ্ছে, সিলেট, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ, হাকালুকি হাওরের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকাধীন ফসল, দামড়িয়া, দুবড়িয়া, চিলুয়া, মল্লিকপুর হাওরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের দুই হাজার হেক্টর ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হাহাকার উঠেছে।
সূত্র আরো জানায়, বন্যার পানি এক্সেভেটর দিয়ে মাটি সরিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোলাপগঞ্জে সর্ববৃহত্তর হাকালুকির হাওর, ধামড়ির হাওর ও বাঘার হাওরসহ ছোট-বড় প্রায় ১৫-২০টি বিলে থাকা মাছ, ফসলের জমি তলিয়ে গেছে বন্যার অথৈই পানিতে। ওসব ফসল হারিয়ে কৃষকদের চোখে-মুখে নেমে এসেছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় লোকজন। তাছাড়া অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা।
এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয় সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ জানান, এখনো সারাদেশে বন্যা দেখা দেয়নি। মাত্র ১১/১২ জেলা বন্যা দেখা দিয়েছে। আগামীতে আরো অনেক জেলায় বন্যা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তার আগে কত হেষ্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলা যাবে না। বন্যার শেষ হওয়ার পর পরে কৃষকদের জন্য সার, বীজসহ সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এবার বন্যা শেষ হলে আবারো দেয়া হবে। সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।