বন্যায় ১৯০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত;
গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে মানুষ আতঙ্ক বাড়ছে চরাঞ্চলে
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা নদীর পানি এরই মধ্যে সতর্ক লেভেলে পৌঁছেছে। গতকাল বিকেল ৩টায় পদ্মা নদীর পানি পাঁকা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চলের ১ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলে পানিবন্দি হয়েছেন হাজার হাজার পরিবার। চরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রামবাসী। এ অবস্থায় আগামীতে পানি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্ক বাড়ছে চরাঞ্চলে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পদ্মা পাড়ের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জেছের আলী জানান, সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মতিন জানিয়েছেন, বন্যার কারণে শিবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের ৯টি স্কুলে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
চরাঞ্চলের কৃষকরা বলেন, প্রতিদিন পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়াবহ হারে। এতে করে নিম্নাঞ্চলের কৃষকের আবাদিজমি পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। ফলে আউশ, রোপা আমন, কলা, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের জমি ডুবে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে— নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানি দ্রুত নেমে গেলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৯২৬ কৃষকের রোপা আউশ ১২৭২ হেক্টর, ৫২ হেক্টর সবজি, ১৩ হেক্টর হলুদ ও ৫ হেক্টর কলা ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে।
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনিসুল হক মাহমুদ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় বন্যার পানিতে ১৩৫ হেক্টর সম্পূর্ণ, ৪০৫ হেক্টর আংশিক আক্রান্ত হয়েছে। তিনি জানান, ৩ হাজার ১৫ জন কৃষকের ৫০৪ হেক্টর ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের জমি ডুবে গেছে।
তবে আক্রান্ত ফসলের মাঠ থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না বলেও জানান এই দুই কৃষি কর্মকর্তা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব জানান, উজানের ঢলে সপ্তাহ ধরে পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার, মহানন্দায় বেড়েছে ৭ সেন্টিমিটার ও পুনর্ভবায় পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার। বর্তমানে পদ্মা বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার, মহানন্দা ৮৩ সেন্টিমিটার এবং পুনর্ভবা নদীর পানি বিপৎসীমার ১.৬৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানির সমতল বিষয়ক প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পাঁকা পয়েন্টে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পানির সমতল ছিল ২১.৭০ মিটার; যা গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৭৩ মিটার।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মহানন্দা নদীর খালঘাট পয়েন্টে পানির সমতল ছিল ১৯.৬৫ মিটার; যা ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পানির সমতল দাঁড়িয়েছে ১৯.৭২ মিটার। অপরদিকে পুনর্ভবা নদীর রহনপুর পয়েন্টে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পানির সমতল ছিল ১৯.৭৬ মিটার; যা গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে সমতল দাঁড়িয়েছে ১৯.৮৬ মিটার। পদ্মা নদীর বিপৎসীমা হচ্ছে ২২.০৫, মহানন্দার ২০.৫৫ ও পুনর্ভবার ২১.৫৫ মিটার।