ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে গ্রেপ্তার
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তেকে ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর মঙ্গলবার (১১ মার্চ) তিনি ম্যানিলা বিমানবন্দরে পৌঁছালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রেসিডেন্ট অফিস এ তথ্য জানিয়েছে। খবর রয়টার্সের। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে তার কঠোর বক্তব্যের জন্য পরিচিত। কিছুদিন আগেই তিনি হংকংয়ে যান। সেখান থেকে আজ মঙ্গলবার ফিলিপাইনে ফেরেন তিনি। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। দুতের্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ডাভাওয়ের মেয়র এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার সময় মাদকবিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, এই যুদ্ধে হাজার হাজার ফিলিপিনোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিকেশন অফিস জানিয়েছে, ইন্টারপোল দুতের্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অফিসিয়াল কপি পেয়েছে ম্যানিলা। গতকাল সোমবার হংকংয়ে থাকাকালীন সময়েই দুতের্তে আভাস পেয়েছিলেন যে, তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোল খুব শিগগির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। তিনি সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের জন্য প্রস্তুত বলেও জানিয়েছিলেন।
“যদি এটা সত্যিই আমার জীবনের ভাগ্য হয়, তাহলে ঠিক আছে, আমি এটা মেনে নেব। তারা আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে, কারারুদ্ধ করতে পারে।” “আমার অপরাধ কী? আমি আমার সময়ে শান্তি এবং ফিলিপাইনের জনগণের শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য সবকিছু করেছি।” তিনি হংকংয়ের সাউথর্ন স্টেডিয়ামে সমাবেশে বলেন উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন। সেখানে তিনি তার মেয়ে ফিলিপাইনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তেকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের কার্যালয় গতকাল সোমবার জানিয়েছিল যে, ইন্টারপোলের কাছ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা পাওয়া যায়নি। তবে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ইঙ্গিত দেয়, এরকম কিছু হলে দুতের্তেকে হস্তান্তর করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্টের কমিউনিকেশন্স আন্ডারসেক্রেটারি ক্লেয়ার কাস্ত্রো সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ইন্টারপোলের অনুরোধের কারণে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করার প্রয়োজন হলে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আইন যা নির্দেশ করে তা অনুসরণ করতে প্রস্তুত।”দুতের্তে মাদকের বিরুদ্ধে তার নির্মম অভিযানের বিষয়ে গত বছর কংগ্রেসের শুনানির সময় বলেছিলেন, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মামলাকে ভয় পান না এবং তদন্তে ‘তাড়াতাড়ি’ করতে বলেছিলেন।
২০১৯ সালে আইসিসি যখন দুতের্তের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্ত শুরু করে, তখন তিনি একতরফাভাবে আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি থেকে ফিলিপাইনকে প্রত্যাহার করে নেন। ওই সময়ে মানবাধিকারকর্মীরা এই কাজকে তার বিরুদ্ধে আনিত গণহত্যার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে উত্থাপন করে। এছাড়া ২০২১ সালে দুতের্তের প্রশাসন আন্তর্জাতি অপরাধ আদালতের তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করার উদ্যোগ নেন। তখন তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, ফিলিপাইনের আদালতই এ বিষয়ে তদন্ত করছে। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে আইসিসির আপিল বিভাগ দুতের্তের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ পুনরায় তদন্ত শুরু করা যেতে পারে বলে রায় দেন এবং দুতের্তের প্রশাসনের আবেদন খারিজ করে দেন।
ফিলিপােইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ২০২২ সালে ক্ষমতায় আসেন। দুতের্তের সঙ্গে তার ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি হয়েছিল। এর ফলে তার প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল, যদি আইসিসি ইন্টারপোলের মাধ্যমে দুতের্তেকে গ্রেপ্তার করতে রেড নোটিশ পাঠায় তাহলে তারা সহযোগিতা করবে।