প্রয়াসের ইউপিপি প্রকল্পের আওতায় উপকরণ বিতরণ

187

ফুড সিকিউরিটি-২০১২ বাংলাদেশ ইউপিপি উজ্জীবিত প্রকল্পের আওতায় কিশোরী ক্লাব, সেলাই প্রশিক্ষণার্থী, ইলেকট্রিশিয়ান ও ঝুঁকি তহবিল সহায়তা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে জেলা শহরের বেলেপুকুরে অবস্থিত প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নকীব হোসেন মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা.এসএফএম খায়রুল আতাতুর্ক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর কারিগরি সহায়তায় এসব বিতরণ করে জেলার উন্নয়ন সংস্থা প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের শিল্পবৃন্দ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তেব্যে সিভিল সার্জন ডা.এসএফএম খায়রুল আতাতুর্ক বলেন, আমরা হেলথের প্রোগ্রাম করি কিন্তু প্রয়াসকে সেভাবে পায়নি সঙ্গে। কিন্তু প্রয়াস ও সেই কার্যক্রম করে । আপনারা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে পারেন। জেলায় তালিকা ভুক্ত আমরা এ ধরনের কাজে সহায়তা করতে পারব। স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু বই আমি আপনাদের লাইব্রেরির জন্য পাঠাব। বইগুলো ,ডাইরিয়া ,কলেরা ,হামসহ বিভিন্ন বিষয়ের। আমাদের পুষ্টিসপ্তাহ চলছে। ১৮ বছরে বিয়ে নয়। কারণ, ১৮ বছর পর্যন্ত একটি মেয়ে শরীর গঠনের সময় লাগে। পুষ্টিমানে আপেল, কমলা, বেদানা না আমরা যে খাবারগুলো খাই তাই। এর মধ্যে সঠিক খাদ্যেউপাদান সমৃদ্ধ চাঁপাই এ আম কাঁঠাল যথেষ্ট। অন্য দামি খাবার খাওয়ানোর দরকার নেই। সার্ভিক্যাল ক্যান্সার ও জরায়ুর ক্যান্সার এর হার চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেশি। এর একমাত্র কারণ, অল্প বয়সে বিয়ে। এর ভ্যাকসিন আছে আমরা সদর হাসপাতালগুলোতে দিচ্ছি। আর থ্যালাসেমিয়া রোগ বেশি। কারণ নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে একই রক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ। বলছিনা যে বিয়ে দিতে হবে না কিন্তু বিয়ের আগে রক্তপরীক্ষা করে একই রক্ত হলে বিয়ে করবেন না। সফল সেলাই প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ১২ জনের প্রত্যেককে ৪ হাজার ৫শ টাকা মূল্যের সিট কাপড় ও ডিজাইন বুক, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ১৩ জনকে ২টি করে ছাগল ও নগদ ২ হাজার এবং ১০ টি কিশোরী ক্লাবের জন্য বইসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়। বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক বলেন, আমাদের জেলা যা কিছু নিয়ে গর্ব করে তার অন্যতম একটি প্রয়াস। গত ২৫ বছর ধরে কাজ করছে এই জেলায়। সাড়ে ৫শ কর্মী বাহিনী রয়েছে প্রয়াসের। আমি একটু ভেবেছিলাম একসময় হঠাৎ গিয়ে চমকে দিব। কিন্তু আজ আমাকে দাওয়াত দিয়ে অতিথি হয়ে আসতে হলো। খুব ভাল লাগছে। কিশোরী ক্লাবের কিশোরীরা খুব আত্মবিশ্বাসী। আত্মসম্মানবোধ থাকতে হবে। একটা কাজ করার আগে দশবার ভাববে আমি কাজটা কি করছি। এখানে উপকার ভোগীদের কথা শুনে ভাল লাগল, একসময় কষ্টে থাকা মানুষটি আজ ভাল আছে। আমাদের ভাল লাগে এই সফলতার কথাগুলো শুনতে। এই কাজগুলো করছে প্রয়াস। সরকারও এই সেক্টরে কাজ করছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমাদের অর্জন লক্ষণীয়। মহান বিজয় অর্জনের পর শুরু হয়েছে কাজ। কিন্তু আমরা খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। এতে সহায়তা করেছে এই রকম সামাজিক সংগঠনগুলো। আমরা চাই জিও-এনজিও সবকাই মিলে কাজ করে দেশটাকে এগিয়ে নিতে। আমরা এগোলে দেশ এগোবে, দেশ এগোলে আমরা এগোবো। কিশোরীদের জন্য বড় পাওয়া এই বই। বুকশেলফ ও বই পেয়ে কখন যে সেটি বইয়ে ভরে যায় নিজেও জানি না। আমরা প্রকাশনা করি। যেমন জাতির পিতার জন্মদিনে একপাতার লিফলেট, পকেটবই আমরা প্রকাশ করেছি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসে যেকোনো চাকরি ক্ষেত্রে। আমাদের বঙ্গবন্ধুকে জানো বইটি কাজে দেবে। এরপর কোনো কিছু থাকলে আমরা সেটি পরবর্তীতে সংস্করণে যুুক্ত করব। কিশোরী ক্লাবের শেলফে আমরা ২১টি বই দেব। তোমাদের ভাগ্য ভাল যে প্রয়াসকে পেয়েছো, আমাদের সময় তো প্রয়াস অফিস ছিলনা। তোমাদের মাঝে একটি লিডারশীপ কোয়ালিটি গড়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা। এর কারিগর প্রয়াস। আমি আশা করব, তোমরা আলোকিত হবে, পাশের জনকে, পিছিয়ে পড়াকে আলোকিত করবে। তোমরা লেখাপড়া, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা করবে। যাতে কেউ তোমাদের দাবায়ে রাখতে না পারে। আমাদের সকলের কার্যক্রমের মাধ্যমে ও তোমাদের অংশগ্রহণে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। সরকার সঠিক পরিকল্পনা করছে ও বাস্তবায়ন করছে। আমরাও সহযোগিতা করব। আমরা উন্নত হলে দেশের কাউকে বাইরে কাজ করতে যেতে হবে না। জেলার উন্নয়নে প্রয়াসের ভূমিকা রয়েছে। যুগ যুগ জিও প্রয়াস। সভাপতির বক্তেব্যে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন বলেন, আমরা যারা মনে করি যে প্রত্যেকটি মানুষ শিক্ষিত স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। নিরক্ষর হতে পারে কিন্তু প্রত্যেকটি মানুষ শিক্ষিত, সে জায়গা থেকে আমরা মনে করি যে, সমাজের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি যে কাজটি সরকারই করছে আমরা পাশে আছি। অথ্যাৎ দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। অর্থাৎ আমরাই কাজ করব আমার যে কাজ সে কাজটি হবে দশেই মিলেই। দশ বাঁচলে আমিও বাঁচব। এ জায়গা থেকে আমাদের প্রয়াসের কাজ। প্রয়াস চাঁপাইনবাবগঞ্জকেই এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছে। এটি আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমরা বিশ্বাস করি চাঁপাইনবাবগঞ্জের যে কথা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের যে ঐতিহ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জের যে দাবি আমরা কোন না কোন ভাবে ভয়েস রেডি করব। ভয়েস আমাদের থাকতে হবে নিজের দক্ষতা উন্নয়নের জায়গায়। প্রোগ্রাম ম্যানেজার (প্রশিক্ষণ) আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রয়াসের পরিচালক মুখলেসুর রহমান, জেষ্ঠ্য উপ-পরিচালক নাসের উদ্দীন সজল, রেডিও মহানন্দার ষ্টেশন ম্যানেজার আলেয়া ফেরদৌস, প্রয়াসের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদসহ কর্মকর্তা ও উপকাভোগীরা।