Site icon রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

পুরুষের যৌনবাহিত ভয়ঙ্কর রোগ গনোরিয়া!

গনোরিয়া হচ্ছে, একটি যৌনবাহিত রোগের নাম। যা নারী-পুরুষ উভয়ের হতে পারে। নিসেরিয়া গনোরি নামক জীবাণুর কারণে এই রোগ হয়।

যৌনমিলনের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের দেহে এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। এটা মূত্রনালি, পায়ুপথ, যোনিপথ, মুখগহ্বর বা চোখ যে কোনো পথেই ছড়াতে পারে। গনোরিয়ায় আক্রান্ত মহিলার সঙ্গে একবার যৌনমিলনের মাধ্যমে পুরুষের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ, তবে সমকামী পুরুষের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও অনেক বেশি। আক্রান্ত পুরুষের সঙ্গে একবার যৌনমিলনে একজন মহিলার এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি প্রায় ৬০-৮০ শতাংশ।

পুরুষের ক্ষেত্রে এই রোগে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া (ডিজইউরিয়া) ও মূত্রনালি দিয়ে পুঁজ বের হয়, টেস্টিকলে ব্যথা প্রভৃতি দেখা যায়।

সময়মতো চিকিৎসা না করালে এই রোগ অণ্ডথলি, প্রোস্টেট, অণ্ডকোষ অথবা বিরলক্ষেত্রে রক্তে ছড়াতে পারে। এই ইনফেকশন অণ্ডকোষের অংশ এপিডিডাইমিসে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে এবং বন্ধাত্বর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। গনোরিয়া সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি এটি শরীরের অস্থিসন্ধিসমূহ ও হার্টের ভালবকেও আক্রান্ত করতে পারে।

নিয়মিত পরীক্ষা এবং দ্রুত চিকিৎসা গনোরিয়ার বিস্তার থামাতে পারে, তাই কোনো সন্দেহজনক উপসর্গ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগটি কোনো রকম লক্ষণ সৃষ্টি করে না। যদিও এ রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে- বিশেষ করে এই ইনফেকশন বাড়তে থাকলে থাকলে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ প্রতিবেদনে পুরুষের গনোরিয়া রোগের চারটি উপসর্গ দেওয়া হলো, যা সবারই জানা থাকা উচিত।

উপসর্গ: * ডিসচার্জ: এই রোগের ইনফেকশনের সর্বাধিক কমন লক্ষণ হচ্ছে ডিসচার্জ।  ডিসচার্জ পাতলা হতে পারে অথবা ঘন হতে পারে, এটি পুরুষভেদে নির্ভর করে। সিডিসি অনুসারে, কোনো পুরুষ সংক্রমিত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে তার ডিসচার্জের অভিজ্ঞতা হবে। ডিসচার্জের বর্ণ কিংবা পরিমাণ যাই হোক না কেন কিংবা ডিসচার্জ প্রতিনিয়ত হোক বা অনিয়মিত হোক, কোনো ডিসচার্জই স্বাভাবিক নয়। যেকোনো ধরনের ডিসচার্জ হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

* নিতম্বে চুলকানি: মায়ো ক্লিনিক অনুসারে, গনোরিয়া মলদ্বারকেও আক্রমণ করতে পারে, যার ফলে মলদ্বারে চুলকানি ও রক্তপাত হতে পারে। এছাড়া ডায়রিয়া হতে পারে এবং প্রাকৃতিক কর্ম সারার সময় ব্যথা অনুভব হতে পারে।

* গলা ব্যথা: ওরাল সেক্স থেকেও গনোরিয়া হতে পারে। গলায় গনোরিয়া ডেভেলপ হওয়া অনেক লোকের উপসর্গ দেখা দেয় না। কারো কারো গলাব্যথা হতে পারে এবং লসিকাগ্রন্থি ফুলে যেতে পারে।

* অণ্ডকোষে ব্যথা অথবা ফোলা: গনোরিয়া ইনফেকশন পার্শ্ববর্তী স্থানে, যেমন- অণ্ডথলি ও অণ্ডকোষ, ছড়ানো শুরু করলে এপিডিডাইমিসে প্রদাহ হতে পারে, যার সঙ্গে থাকতে পারে কুঁচকি ব্যথা।

চিকিৎসা: এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকে বেশ ভালো সুফল পাওয়া যায়। রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্বিধা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, উপযুক্ত চিকিৎসায় এটি সেরে যায়। চিকিৎসা না নিলে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দেয় এবং চিকিৎসা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

প্রতিরোধের উপায়: প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হচ্ছে কেবল একজন সঙ্গিনীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রাখা নিশ্চিতভাবে যার গনোরিয়া নেই। বহুগামিতা পরিত্যাগ ও সঠিক পদ্ধতিতে কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা যায়।

আক্রান্ত হলে করণীয়: দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান এবং তাকে সবটা খুলে বলুন। যেমন- আপনার সব লক্ষণ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা,
আপনার যৌন জীবন, পূর্ববর্তী একই রকম সমস্যা থেকে থাকলে তা চিকিৎসকে বলুন। আপনার সঙ্গীকে দ্রুত জানান এবং তাকেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলুন। চিকিৎসক আপনাকে যে অ্যান্টিবায়োটিক এর কোর্সটি নিতে বলেছেন সেটি অবশ্যই সম্পূর্ণ করুন।
৭-১০ দিনের ব্যবধানে ডাক্তারের ফলোআপে থাকুন। আপনি এবং আপনার সঙ্গীর সব পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এলে তারপর যৌনমিলন করুন।

তথ্যসূত্র: ম্যান’স হেলথ

Exit mobile version