পানি ব্যবহার করা হয় কেন আগুন নেভাতে

50

কোথাও আগুন লেগেছে। চারপাশে ভয়ার্ত চিৎকার। এর মধ্যে কিছু মানুষকে দেখবেন চিৎকার না করে বালতি হাতে ছুটছে, পানি এনে ছুড়ে দিচ্ছে আগুনে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ঢালার পর দেখা যায়, একসময় পানি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রথমেই একটা কথা বলে নিই, সব আগুন পানিতে নেভে না। বলতে পারেন, আগুনের আবার রকমফের হয় নাকি? এমনিতে আগুন সব একই। কিন্তু কিসে আগুন লাগছে সেটাও একটা ব্যাপার।

কাঠ, বাঁশ, কাপড়, কাগজ, প্লাস্টিক, রাবার—এসব বস্তুতে আগুন লাগলে পানি দিলে নেভে। বৈদ্যুতিক বা তেলের কারণে যেসব আগুন জ্বলে সেগুলো পানিতে নেভে না। কেন নেভে না, সে আলোচনা পরে হবে। এখন বরং কেন পানিতে আগুন নেভে, সে বিষয়টা দেখে নেওয়া যাক। আগুন জ্বলার তিনটি শর্ত আছে। অক্সিজেন, তাপ আর দাহ্য বস্তু। এই তিনটির যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে আগুন জ্বলবে না। তেমনি আগুন জ্বলার পর এই তিনটির যেকোনো একটিকে সরিয়ে দিতে পারলেই আগুন নিভে যায়। আগুন নেভানোর সময় তাই এই চেষ্টাটাই করা হয়।একটি পানির অণুতে আছে দুটি হাইড্রোজেন ও একটি অক্সিজেন পরমাণু। হাইড্রোজেন নিজে একটি দাহ্য পদার্থ। অন্যদিকে অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। পানিতে অক্সিজেন আর হাইড্রোজেনের মধ্যে শক্তিশালী বিদ্যুৎচুম্বকীয় বন্ধন রয়েছে। বিশেষ কিছু প্রক্রিয়াতেই পানি শুধু অন্য পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। কিন্তু আগুন জ্বলার যে শর্ত তাতে অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন মুক্তভাবে থাকলেই কেবল তা দিয়ে আগুন জ্বালানো যেত। কিন্তু পানিতে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে থাকে বলে এরা সরাসরি জ্বলন্ত আগুনে সক্রিয়তা দেখাতে পারে না। বরং উল্টো আগুন নেভাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে পানি বাষ্পীভূত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে কাঠের চারপাশে। ফলে আশপাশের অক্সিজেন কাঠের কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। অর্থাৎ অক্সিজেনের প্রবাহ খুব কমে যাচ্ছে। আর অক্সিজেন না থাকলে কখনোই আগুন জ্বলতে পারবে না। সুতরাং আগুন একসময় নিভে যাবে। এই কৌশলেই পানি আগুন নিভতে সাহায্য করে। তবে সাবধান, তেল বা বিদ্যুৎ থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে পানি ঢালবেন না, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।