পাকিস্তান ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ আয়োজনের আশা করছে

190

২০২০ সালে নিজ মাঠে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ আয়োজনের আশা করছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডজের বিপক্ষে সফলভাবে সিরিজ আয়োজনের পর আশাবাদী হয়ে উঠেছেন দেশটির ক্রিকেট কর্তারা।
এক সময়ের সন্ত্রাসকবলিত বন্দর নগরী করাচিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ আয়োজন করে পিসিবি। এ ছাড়া গত মাসে পাকিস্তান সুপার লীগের (পিএসএল) ফাইনাল ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হয় এখানে। যা ছিল ২০০৯ সালের পর এ শহরে সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দল বহনকারী বাসে জঙ্গী হামলার পর থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে।
যে কারণে নিজেদের আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজন করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। তবে গত তিন বছরে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্তিতির উন্নতি হওয়ায় বোর্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরিয়ে আনতে ‘পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ’ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিসিবি চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি।
বার্তা মসংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘এগুলো ইবিাচক ফল বয়ে আনছে। আগামি বছর পিএসএলের আরো বেশি ম্যাচ আমরা পাকিস্তানে আয়োজন করবো এবং সে সময় শীর্ষ ক্রিকেটীয় দেশগুলোর প্রায় সব আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় পাকিস্তানে খেলবে’ বলে আশা করছেন তিনি। এরপর ২০২০ সালে তাদের দেশের বোর্ডগুলোকে পাকিস্তানে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে জাতীয় দল পাঠাতে রাজি করাতে পারবো।’ বেশ কয়েক বার মিথ্যা আশ্বাসের পর আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তিনি। এর আগে ২০১১ সালে শ্রীলংকা দল পাকিস্তান সফরে রাজি হয়েছিল। তবে করাচিতে নৌবাহিনীর একটি ঘাটিতে জঙ্গী হামলার পর সে আশা ভেস্তে যায়। এরপর ২০১৪ সফরের জন্য আয়ারল্যান্ডকে সম্মত করেছিল পিসিবি। তবে করাচি বিমানবন্দরে জঙ্গী হামলার পর আইরিশরা সফর বাতিল করে।
প্রাথমিকভাবে রাজি হওয়ার পরও নিরাপত্তার কারণে ২০১২ সালে দুইবার পাকিস্তান সফরে অস্বীকৃতি জানায় বাংলাদেশ। তবে প্রথম আন্তর্জাতিক দল হিসেবে দুর্বল জিম্বাবুয়ে সফরে আসলে ২০১৫ সালে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত বাজে।
সে সময় এ ম্যাচ আয়োজনে নিরাপত্তা বাহিনীর ত্রিশ হাজার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছিল। ছয় বছর পর নিজ মাঠের আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে দর্শকদের কড়া নিরাত্তার মধ্যদিয়ে মাঠে আসতে হয়েছিল। বিভিন্ন চেক পয়েন্ট বসানো হয়েছিল। পদে পদে বাধা সহ্য করতে হয়েছিল দর্শকদের।
সবাই এটাকে সফল হিসেবে দেখছেন না। সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান বলেন, ‘রাস্তা-ঘাট, দোকানপাট বন্ধ করে ম্যাচ আয়োজনে বিদেশে কোন ধরনের শান্তির বাণী পৌঁছাবে?’  ২০১৭ পিএসএল ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল লাহোরে। ইংল্যান্ডের কেভিন পিটারসেন, অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার রিলি রোসৌর মতো কিছু তারকা খেলোয়াড় ফাইনাল খেলতে পাকিস্তান সফরে যায়নি।
তবে দুইবারের টি-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন সামির মতো খেলোয়াড়রা এসেছেন এবং পাকিস্তানীদের মন জয় করেছেন। যা বিশ্ব একাদশের এবং এরপর গতবছর অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা দলের পাকিস্তান সফরকে তরান্বিত করেছিল। পাকিস্তানে জনপ্রিয় স্যামি এ বছরও পিএসএল প্লে-অফ ম্যাচ খেলেছেন লাহোরে এবং করাচিতে ফাইনাল খেলেছেন। তার উপস্থিতিতে উদ্দীপ্ত হয়ে তার সাবেক সতীর্থ আন্দ্রে ফ্লেচার, স্যামুয়েল বদ্রি এবং চাঁদউইক ওয়ালটনরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে পাকিস্তান সফর করেছেন।  নিরাপত্তা নিয়ে এখনো সমস্যা থাকায় প্রত্যেক সফরে বিদেশী দলগুলোকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দেয়া হয়ে থাকে। যে কারণে এখানকার সার্বিক অবস্থা দেখভাল করার জন্য আইসিসি একটি বিদেশী নিরাপত্তা কোম্পানি নিয়োগ দিয়েছে। শেঠি বলেন, ‘লাহোর ও করাচির ম্যাচগুলোর জন্য সেখানকার জনগনকে বেশ ভুগতে হয়েছে আমরা সেটা অনুধাবন করছি। তবে আবার এটা পাকিস্তানের জন্য অনেক বড় কিছু।’ পিসিবি এখন আরো বড় দলকে সফরে আনতে চায়। আগামি বছর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলের পাকিস্তান সফরে আশাবাদী পাকিস্তান। ইংল্যান্ড দলকে সফরের আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাসস।