পাঁচ দিনের মধ্যেই বন্দরে চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ : মতবিনিময় সভায় ভোক্তার ডিজির ঘোষণা
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, বর্তমানে পরিবর্তীত পরিস্থিতি আমাদের জন্য সহায়ক। আগে একটা রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ও ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি হয়ছে। কিন্তু এখন যেহেতু তা নেই, তাই তা বন্ধ হবে। এ নিয়ে আগামী ৫ দিনের মধ্যেই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রবিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমদানি-রপ্তানিকারক, স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, পরিবহন নেতৃবৃন্দ, ক্যাব ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। শুক্রবার ও শনিবার সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি বন্ধ থাকার সুযোগে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ খাদ্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। কাজেই এই দুই দিন খাদ্যপণ্য আমদানির সুযোগ দিলে ভোক্তাদের সুবিধা হতো- এক সাংবাদিকের এমন পরামর্শ শুনে মহাপরিচালক বলেন, বন্ধের দিনে পণ্যের দাম বেড়ে যাই, এটা আমরা সরকারকে জানাবো। যাতে করে বন্ধের দিনেও কিভাবে পণ্য নিয়ে আসা যায়।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মোহাম্মদ আলীম আখতার খান আরো বলেন, কোল্ডস্টোরেজগুলোর সঙ্গেও কথা বলতে হবে। তারা যেন মূল্য টাঙিয়ে রাখে। তা ছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের দূর করতে হবে। তিনি বলেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শনে এসে দেখলাম, কিছু পণ্য আসতে আসতেই নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন আমদানিকারকরা। তাদের দাবি, যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়, তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যবহারযোগ্য থাকে না। এর ফলে দাম নির্ধারণ করতে গিয়ে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়, যা ভোক্তার ওপর প্রভাব ফেলে। মূল্য কিভাবে ভোক্তার অনুকূলে আনা যায়, এ নিয়ে আমরা কথা বলব। সমস্যা সমাধানে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে।
ভোক্তাপর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কমাতে কি কি উদ্যোগ নেয়া যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এটি বলা যাবে না। প্রথমত আমাদের দেশীয় উৎপাদন যাতে চাহিদামতো বাড়ানো যায়, সেটি কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে পরিকল্পনা করতে হবে। পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানিতে পচে যাওয়া রোধে কিভাবে ব্যবহার উপযোগী পেঁয়াজ আনা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা প্রশাসন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি আরো বলেন, এছাড়াও জেলা প্রশাসনের যে ভূমিকা সেটা পালনে জেলা প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, সেগুলোকে আমরা অ্যাড্রেস করব এবং এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, এইরকম ভোগ্যপণ্যে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোরভাবে আমাদের অবস্থান থাকবে এবং আমরা কঠোর অ্যাকশন নিব। এছাড়াও জেলা প্রশাসন এখানে আরেকটা ইনস্টিটিউশন হিসেবে আপনাদের সহযোগিতায় প্রস্তুত আছে। আমরা অ্যাকশন নিলে অনেক ক্ষেত্রে একটা অংশ অতৃপ্ত থাকে; কিন্তু আমরা সবাই যদি এক হই, ভোক্তাদেরকে ফোকাস করি এবং এই সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করি, কেউ তাহলে আসতে পারবে না দাঁড়াতে পারবে না। আমরা নিজেরাও এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। সংস্থাটির কার্যক্রম ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, স্থলবন্দরের কমিশন এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ তারা ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করে আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে ভোক্তার ওপর।
চাঁদাবাজি বন্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরুর কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়ে পুলিশ সুপার সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময়কালে আমাদানিকারকরা তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবির্ক) মো. নাকিব হাসান তরফদার, রাজস্ব কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার, জেলা মৎস্য অফিসার মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা, জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি আমিনুল ইসলাম সেন্টু, সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি কাজী সাহাবুদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, জেলা ট্রাক ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনয়িনের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের প্রতনিধি শহিদুল ইসলামসহ আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ, পরিবহন গ্রুপের নেতৃবৃন্দ, পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের প্রতিনিধি, ক্যাব প্রতিনিধি, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি র্কমর্কতারা উপস্থতি ছিলেন। উল্লেখ্য, এর আগে গত শনিবার রাত ৯টার দিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খানসহ অন্যরা।