01713248557

পদ্মা মহানন্দা পুনর্ভবায় বেড়েছে পানি নিমজ্জিত ১৩৫৪ হেক্টর জমির ফসল

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতে বন্যার পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে সোমবার পর্যন্ত মাসকলাইসহ ১ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মাসকলাইয়ের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ হাজার ২৮৫ জন কৃষকের ২৫ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমির মাসকলাইয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে ১ হাজার ৩১২ হেক্টর জমি। অন্যদিকে ৩০ জন কৃষকের ৫ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ৮০ জন কৃষকের ৯ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ১৭০ জন কৃষকের ২৫ হেক্টর সবজি, ২০ জন কৃষকের ৩ হেক্টর চিনা নিমজ্জিত হয়েছে।
আক্রান্ত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে- সদর উপজেলার আলাতুলি, শাহজাহানপুর, চরবাগডাঙ্গা, বারঘরিয়া এবং শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, দুর্লভপুর, ঘোড়াপাখিয়া, ছত্রাজিতপুর, মনাকষা, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর, চৌডালা, রাধানগর, বোয়ালিয়া, বাঙ্গাবাড়ী, আলীনগর ও রহনপুর পৌরসভা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নারায়ণপুর ইউনিয়নের কৃষক জসীম উদ্দীন বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে মাসকলাই বীজ বুনেছিলাম। হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার সব জমির মাসকালাই ডুবে যায়। কয়েক দিনের মধ্যে যদি পানি না নামে, তাহলে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জমির মাসকালাই ডুবে যাওয়ায় নষ্ট হতে বসেছে।
এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, বন্যায় বসতবাড়ি না ডুবলেও পাঁকা ইউনিয়নের মাসকলাই সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। ২ হাজার ৫০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নে ৪১টি ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের ১১০টি পরিবার পদ্মা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন। শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. তাছমিনা খাতুন জানান, চলতি বন্যা মৌসুমে সদর উপজেলার আলাতুলি ইউনিয়নে বন্যায় ৪২২টি পরিবার ও নারায়ণপুর ইউনিয়নে বন্যা ও নদী ভাঙনে ৪২৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাসকলাই হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের খাদ্য তালিকার প্রধান একটি ফসল। এখনো গ্রামবাংলার মানুষ মাসকলাইয়ের রুটি খেয়ে সকালের নাস্তা সারেন। ডাল হিসেবেও মাসকলাইয়ের জুড়ি নেই। পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পলিপড়া জমিতে কৃষকরা কোনো জমি তৈরি ছাড়াই মাসকলাইয়ের বীজ জমিতে ছিটিয়ে দেন। বিশেষ করে পদ্মার চরবেষ্টিত এলাকার কৃষকরা প্রতিবছর বন্যার পানি ওঠানামার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
অন্যদিকে পদ্মা নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনে ভাঙনের খেলা চলছেই। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু শোয়েব জানান, চলতি বছর শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকার ঘাট, পন্ডিতপাড়া, নামোজগন্নাথপুর, মনোহরপুর এলাকায় পদ্মা নদীর বাম তীরে সাড়ে ৫ কিলোমিটার জুড়ে নদী ভাঙন হয়েছে। এছাড়া ডান তীরে পাঁকা-নারায়ণপুর এলাকায় প্রায় ৫ কিলোমিটার ভেঙেছে। অন্যদিকে সদর উপজেলার আলাতুলি ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ডান তীরে নদী ভেঙেছে প্রায় দেড় কিলোমিটার।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় ১২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সোমবার বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়। পদ্মার বিপৎসীমা হচ্ছে ২২.০৫ মিটার। বর্তমান পানির উচ্চতা ২১.১৭ মিটার। পদ্মা নদীর পাঁকা পয়েন্টে পানির স্তর রেকর্ড করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।