না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিম উদ দৌলা চৌধুরী

88

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিম উদ দৌলা চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকায় গ্রিন লাইফ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তাঁর কাছের মানুষ বিশিষ্ট সমাজসেবক সফিকুল আলম ভোতা এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মনিম উদ দৌলা চৌধুরীর ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়েছিল। আগামীকাল মঙ্গলবার তার অপারেশনের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি চলে গেলেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফকিরপাড়া ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে ফকিরপাড়া গোরস্থানে দাফন করা হবে।
সফিকুল আলম ভোতা আরো জানান, মনিম উদ দৌলা চৌধুরী শিশু শিক্ষা নিকেতনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
এছাড়াও মনিম উদ দৌলা চৌধুরী যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি, নাটাব জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইউনিটের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একমাত্র কমিউনিটি রেডিও মহানন্দার উপদেষ্টা কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি এবং এই রেডিও মহানন্দার প্রতি তার ছিল প্রচ- ভালোবাসা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মোখলেসুর রহমান তার ফেসবুকে জানিয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিম উদ দৌলা চৌধুরী পৌরসভার টাউন লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (টিএলসিসি)’র সম্মানিত সদস্য ছিলেন। তিনি গভীর শোক প্রকাশ করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মন্টু জানান, মনিম উদ দৌলা চৌধুরী ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এদিকে মনিম উদ দৌলা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এবং রেডিও মহানন্দার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিব হোসেন ও রেডিও মহানন্দার স্টেশন ম্যানেজার আলেয়া ফেরদৌস।
এদিকে আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনলাইনে প্রকাশিত তথ্যমতে, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিম উদ দৌলা চৌধুরী ১৯৪৯ সালের ৬ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরে জেলা শহরের হুজরাপুর ওয়াল্টন মোড় এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তাঁর পিতা আহমেদ মাদানী চৌধুরী এবং মাতা কুলসুম বেগম।
১৯৬৭ সালে নবাবগঞ্জ হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৯ সালে নবাবগঞ্জ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ইতিহাস বিভাগে বি.এ. (অনার্স) ও এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭১ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সেই সময় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আদমপুর (ভারত) প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পলিটিক্যাল মোটিভেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন পেয়েছেন আবৃত্তিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পুরস্কার-সম্মাননা। ১৯৬৭-৬৮ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সাংস্কৃতিক সপ্তাহে আবৃত্তিতে প্রথম, ১৯৬৯-৭০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিতে প্রথম এবং ১৯৭০-৭১ সালে লতিফ হল সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন।
ছাত্রজীবন থেকে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করে ‘আবৃত্তিকার’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা পরিচালনা এবং বিচারকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
খ্যাতিমান আবৃত্তিকার শুধু নন, ক্রীড়াবিদ এবং সমাজসেবী হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গুণী এই আবৃত্তিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিম উদ দৌলা চৌধুরীকে ২০১৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা পদক-২০১৩ প্রদান করা হয়।