নারী কিংবা পুরুষ কিসে আটকায়?

59

দীর্ঘ ১৮ বছরের সংসার জীবনের ইতি টেনেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো। তাদের এই বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সব দেশেই। এ খবর জানার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে চালু হয়ে যায় একটি ট্রেন্ড। তাতে গা ভাসিয়েছেন অনেকেই। এক শ্রেণির মানুষ সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন, ‘নারী কিসে আটকায়?’ এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মত উঠে আসে। পাশাপাশি ‘পুরুষ কিসে আটকায়’ এমন প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ। এর সূত্র ধরেই আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায় মিম, ট্রল আর পোস্ট-পাল্টা পোস্টের ঝড়।

বিষয়টি এখন কিছুটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে আছে বলে মনে করছেন সুশীলরা। নারীকে ছোট বা হেয় করতে এমন প্রসঙ্গ আনা অবান্তর। কোনো মানুষই কোনো কিছুতে আটকে থাকে না। আবার কোনো কিছুকে ছেড়েও যেতে পারে না। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। সে হোক নারী কিংবা পুরুষ। এই আটকে থাকাটা মূলত সম্পর্ক, মায়া, ভালোবাসা, দায়িত্ব এবং দায়বোধ থেকে তৈরি হয়। অনেকাংশে ব্যক্তির সম্মান-মর্যাদার সঙ্গেও যুক্ত।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। তাতে লেখা হয়, ‘জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতায়, বিল গেটসের টাকায়, ফুটবলার হাকিমির জনপ্রিয়তায়, হুমায়ূন ফরিদীর ভালোবাসায়, তাহসানের কণ্ঠে কিংবা হৃতিক রোশনের স্মার্টনেসে—কোনো কিছুই নারীকে আটকাতে পারেনি। বলতে পারবেন নারী আসলে কীসে আটকায়?’ মুহূর্তেই এ পোস্ট যেন ট্রেন্ডিংয়ে পরিণত হয়ে যায়। ফলে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কবি, লেখক, সাংবাদিক, অভিনয়শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

ঢাকাই সিনেমার আরেক চিত্রনায়িকা হুমায়রা সুবাহ অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছেন, ‘মেয়েরা শুধু বিশ্বস্ততায় আটকায়। অনেক টাকাওয়ালা, গুণী, প্রতিষ্ঠিত মানুষকে ফেলে রেখে চলে যেতে দেখিছি অনেক বউ বা প্রেয়সীকে। কারণ নারী শুধু পুরুষের টাকায়, রূপে-গুণে আর ক্ষমতায় আটকায় না। নারী সারাজীবনের জন্য বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছে আটকে যায়। যে তার বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে জানে। আবার অনেক সুন্দরী গুণী নারীকে দেখেছি কম টাকাওয়ালা মানুষের সঙ্গে ভাঙা ঘরে সুখে সংসার করতে। কারণ নারী সব পারে, কিন্তু ভালোবাসার মানুষের ভাগ দিতে পারে না। সম্মান আর বিশ্বাসে নারী আটকে থাকে তার বিশ্বস্ত পুরুষের সঙ্গে।’

আমার প্রশ্ন হলো, কেন শুধু নারীর প্রতিই এমন ‘আটকে থাকার’ প্রসঙ্গ আসবে? এমন অভিযোগ তো পুরুষের বেলায়ও আসতে পারে। তাহলে কি যে কোনো কিছুর বিনিময়ে নারীকেই সব সময় সম্পর্কে লেগে থাকতে হবে? পুরুষকে সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে না? সব দায়ভার কি কেবল নারীর? নারী স্বামী পরিত্যক্ত, নির্যাতিত কিংবা অসুখী হলেও সে দায়ভার কি তার? স্বামী বিচ্ছেদ চাইলেও সমাজ কেন নারীর দিকেই আঙুল তোলে? সব সময় নারীর প্রতিই এ অসম প্রত্যাশা ও দাবি কেন তোলা হয়?

নারীর প্রসঙ্গ পাল্টে কথাসাহিত্যিক ফরিদুল ইসলাম নির্জন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘এক কথায় প্রকাশ করুন:- পুরুষ কিসে আটকায়? -পুরুষ আটকায় নারীতে!’ তিনিও একভাবে পুরুষকে টেনে নিয়েছেন নারীর দিকে। তিনি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুজনকেই হয়তো গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তার এ পোস্টের কমেন্টে মাহাবুব রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘পুরুষ আটকায় মায়ায়। মায়া জিনিসটা নারীর চাইতে বেশি সন্তানের ক্ষেত্রে গাঢ় হয়। অনেক দম্পতি হাজারো অভিযোগ অশান্তি সহ্য করে সন্তানের জন্য আটকে থাকতে দেখেছি।’

এর বাইরে কেউ কেউ বিষয়টিকে হাস্যরসে রূপ দিয়েছেন। সিরিয়াস বিষয়টিও যেন কৌতুকে পরিণত হয়েছে। তবে নারী কিংবা পুরুষ, কে কিসে আটকাবে; তা কেবল নির্ভর করছে তার মানসিকতার ওপরে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে শুধু নারীদের দোষারোপ করা যায় না। পুরুষেরও দোষ খোঁজা উচিত। কিংবা উভয়ের কারণেই কেবল বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। এককভাবে কাউকে দোষারোপ করা সমীচীন নয়।

যতই ট্রেন্ড তৈরি হোক। আলোচনার ঝড় উঠুক। দিন শেষে কথা কিন্তু একটাই। নারী-পুরুষ উভয় উভয়ের কাছেই আটকে যায়। ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধা পড়ে। ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় হলে সে সম্পর্ক টিকে থাকে। বন্ধন হালকা হলে ক্রমান্বয়ে সে সম্পর্ক নড়বড়ে হতে হতে বিচ্ছেদের দিকে ধাবিত হয়। ফলে নারী কিংবা পুরুষ, কে কিসে আটকাবে সে বিষয়ে তর্ক চলতেই থাকবে। হয়তো এই ইস্যু ঢাকা পড়ে গিয়ে অন্য ইস্যুর জন্ম হবে।