নানি-নাতির ক্রিকেট প্রেম থেকে টেস্ট দলে মুশফিক

98

অভাবের সংসারে ভাগ্য পরিবর্তন করতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় কি? বাংলাদেশের পেস ব্রিগেডের নয়া সৈনিক মুশফিক হাসানের গল্পটা শুনলে মনে হবে, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব সহজেই।

টেপ টেনিস ক্রিকেট দিয়ে পথ চলা শুরুর পর একদিন হুট করেই লালমনিরহাটে দ্বিতীয় বিভাগ খেলার সুযোগ হয় মুশফিকের। ক্রিকেট বলে প্রথমবার খেলতে নেমে স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলে রীতিমত আলোড়ন তৈরি করেন। মাঠে থাকা বিভাগীয় কোচ বিপুল ফাতেমী নিকেল তার ফোন নম্বর নিয়ে দুই মাস পর সুযোগ করে দেন অনূর্ধ্ব-১৬ জেলা দলে খেলার। অনূর্ধ্ব-১৬ দলে টিকে যাওয়ার পর তার অটো প্রমোশন হয় বিভাগীয় -১৮ দলে। সেখানে খেলতে গিয়ে তার দিকে আলাদা নজর পড়ে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হাসিবুল হোসেন শান্তর। এরপর শান্তর হাত ধরেই মুশফিক চলে আসেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ট্রায়ালে। সেখানে সবচেয়ে জোরে বল করে মুশফিক অবধারিতভাবে ঢুকে যান দলে।

এরপর সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে কেবল এগিয়ে চলা ডানহাতি পেসারের। যুব দল, এইচপি, বাংলাদেশ ‘এ’ দল পেরিয়ে মুশফিক হাসান এখন জাতীয় দলের চৌকাঠে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের দলে তাকে দলভুক্ত করেছেন নির্বাচকরা। যেখানে আরো আছেন তাসকিন, ইবাদত, খালেদ ও শরিফুল।

মুশফিকের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক সবেমাত্র একবছর হলো। ২০ বছর বয়সী পেসারকে বেশ প্রতিশ্রুতিশীল মনে করছেন নির্বাচকরা। পরিসংখ্যানও তার পক্ষে কথা বলছে। ১৩ ম্যাচে ৪৯ উইকেট পেয়েছেন। রয়েছে ৩টি পাঁচ উইকেটও। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে খেলেছেন। সেখানে ভালো করায় জাতীয় দলের দুয়ার খুলে গেছে। মুশফিকের ক্রিকেটার হবার পেছনে গল্পটা একটু আলাদা। অভাবের সংসারের ভাগ্য পরিবর্তন করতে নানির কাছে মুশফিক ও তার ছোট বোনকে রেখে বাবা-মা ঢাকায় পাড়ি দিয়েছিলেন। গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চালাতেন তারা। নানির কাছে ক্রিকেটার হবার স্বপ্নটা ছিল স্রেফ বাড়াবাড়ি। কিন্তু নানি-নাতির ক্রিকেট প্রেম এতোটাই ছিল যে, তারা নিজেরা নিজেরাই ঠিক করে নেন, সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে।

পড়াশোনার পাশাপাশি মুশফিক ক্রিকেট খেলতেন। পাড়ার বড় ভাইরাও অনুপ্রেরণা যোগাতেন। কিন্তু সাহস দিতেন নানি। বলতেন, যেটাই করবি মন দিয়ে করবি। ক্রিকেট খেলবি মন দিয়ে খেলবি।

মুশফিক বলেন, আমি ভালো করলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন নানি। তিনি আমার সাহস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমার ক্রিকেটার হবার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তারই। বাবা-মার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া, মাঠে পাঠানো সব উনিই করেছেন। নানি ক্রিকেটের কিছুই বুঝতেন না। নাতি ক্রিকেট খেলে আনন্দ পাচ্ছেন বলে খেলাটার প্রতি তারও ভালোবাসা জন্মায়। দুজনের সেই ক্রিকেট প্রেম থেকেই লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সাহেডাঙা গ্রামের ছোট ঘরে একটা স্বপ্ন দেখা শুরু। নানা পথ, নানা অলিগলি পেরিয়ে মুশফিকের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রোববার। যেদিন তার নাম লেখা হয়েছে তামিম, লিটনদের সঙ্গে।

শুধু জোরে বল করতে পারেন বলেই নয়, মুশফিকের রয়েছে বৈচিত্র্য আর নিয়ন্ত্রণ। এক জায়গায় লাগাতার বল করে ব্যাটসম্যানকে খেলাতে বাধ্য করতে পারেন যা বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে খুব প্রয়োজন।

তাকে নিয়ে আশার কথা শোনালেন প্রধান নির্বাচক মিনাহজুল আবেদীন নান্নু, মুশফিক অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের খেলেছে। এরপর আমাদের হাই পারফরম্যান্স বিভাগে ছিল। ‘এ’ দলের খেলায়ও যথেষ্ট ভালো করেছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী। সুযোগ পেলে ভালো করবে।

এর আগে, মুশফিককে নেটে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন জাতীয় দলের বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, আমি মুশফিক হাসানে দারুণ মুগ্ধ হয়েছি। তরুণদের মাঝে সে খুবই শক্ত পোক্ত অ্যাথলেট।

মুশফিক নিজের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গে অভাবের সংসারে আলো এনেছেন। বাবা-মাকে ঢাকা থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন বাড়িতে। গোলাকার চর্মের বল দিয়েই ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। সেই বল দিয়েই এখন দেশের নাম উজ্জ্বল করতে চান তরুণ তুর্কী।