নাচোলে নবনির্মিত ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা উদ্বোধন

133

আলোচিত সংগ্রামের প্রায় ৮ দশক পর নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের রাওতাড়া গ্রামে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তির নেত্রী, ‘নাচোলের রানী মা’ খ্যাত কৃষক নেতা ইলা মিত্রের স্মৃতি বিজড়িত সামগ্রী ও উপাদান, তেভাগা আন্দোলনে ব্যবহৃত সামগ্রী, বরেন্দ্র অঞ্চলের হারিয়ে যেতে বসা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ব্যবহার্য ঐতিহাসিক ও গ্রামীন বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শণের জন্য নবনির্মিত ‘ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা’ উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহশালা উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ.কে.এম গালিভ খাঁনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে হারিয়ে যেতে বসা একটি বিরল সংগ্রামকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা প্রশংসনীয়। সরকার নিশ্চয় উদ্যোগটি আরও এগিয়ে নিবে। উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন ভাল উদ্যোগকে সবধরণের সমর্থণ ও উসাহিত করা হবে। সম্মানিত করা হবে। সকলকে আমাদের অতীত ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে।
নাচোলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান বলেন,জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে উপজেলা প্রশাসন ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে সরকারি খাস জমিতে কাজ শুরু করে ২৬ শতক জমির প্রাঙ্গণের উপর স্মৃতিশালার মূল দ্বিতল ভবন নির্মান সম্পন্ন করেছেন। ৮০০ বর্গফুটের এই ভবনের নীচতলায় রয়েছে দুটি গ্যাল্যারি। উপরতলায় রয়েছে একটি বড় গ্যাল্যারি। দোতলায় ওঠার জন্য সামনের দিকে রয়েছে একটি কাঠের সিঁড়ি। এছাড়া স্মৃতিশালা প্রাঙ্গণে রয়েছে ইলা মিত্রের একটি ম্যূরাল প্রতিকৃতি। এছাড়া ঐতিহাসিক ও গ্রামীন সামগ্রী প্রদর্শণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রতিটি ২১০ বর্গফুট আয়তনের দুটি গোলাকৃতি গ্যালারি। মূলত: মাটি দিয়ে স্থাপনাগুলো তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া ব্যবহার হয়েছে কাঠ। স্মুতিশালার জন্য নাচোলসহ জেলার ও দেশের বিভিন্ন স্থান এমনকি ভারত থেকেও নিদর্শণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্মৃতিশালার পাশেই রয়েছে প্রাচীন একটি মঠ (সাঁওতাল মন্দির) যা ইলামিত্র মঠ নামে পরিচিত।
সবুজ হাসান আরও বলেন, স্মৃতিশালা পূর্ণাঙ্গ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এছাড়া স্মৃতিশালাটি ঘিরে একটি পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ চলছে। নির্মাণ চলছে উদ্ধারকৃত বেদখল হওয়া ৮৮ শতক জমির উপর গাড়ি পার্কিং,৫২ শতক জমির উপর পুকুর ও ৬৯ শতক জমির উপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মাঠ সহ একটি মঞ্চ নির্মাণ কাজ। যোগাযোগের জন্য জেলা সদর ও নাচোল উপজেলা সদরমুখী দুটি সড়ক উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্থানটি জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত। এ পর্য়ন্ত প্রকল্পে ২৬ লক্ষ টাকা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যয় করা হয়েছে।
নাচোল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক এবং ইলা মিত্রকে নিয়ে ‘ইলামিত্র ও নাচোল’ ও আন্দোলন সংগ্রামে নাচোল’ নামে দুটি গ্রন্থের রচরিতা, ১৯৯০ সাল থেকে ইলামিত্র ও তেভাগা আন্দোলন নিয়ে গবেষণাকারী আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংগ্রহশালা এলাকায় ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারী ইলা মিত্রের নেতৃত্ব তেভাগা আন্দোলনের মূল সশস্ত্র সংগ্রাম সংঘটিত হয়। নিহত হয় এক দারোগাসহ ৪ পাকিস্তানি পুলিশ। ফলে ২ দিন পর ৭ জানুয়ারী গ্রেপ্তার হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরহাট গ্রামের জমিদার বাড়ির বধু আধুনিক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ইলা মিত্র। তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতণ হয়। জেল হয়। জঙ্গলাকীর্ণ সাঁওতাল গ্রাম ঘেরা দূর্গম স্থানটি ছিল এ অঞ্চলে ১৯৪৬-৫০ সাল পর্যন্ত চলা বঞ্চনার বিরুদ্ধে তেভাগা আন্দোলনকরাীদের আন্দোলনের মূল কেন্দ্র। স্মৃতিশালা স্থাপনের মাধ্যমে ইলা মিত্র ও তেভাগা আন্দোলনে জড়িতদের এতদিনে কিছুটা হলেও সম্মানিত করা হল। নাচোল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, এটি নির্মাণের জন্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী,স্থানীয় তথা নাচোলসহ জেলাবাসী এবং বিভিন্ন মহলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এই উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে বঞ্চনার বিরুদ্ধে শোষিতের সংগ্রামের ঋণ কিছুটা হলেও পরিশোধের সূচনা হল।