নাচোলে জনবল সংকটে ব্যাহত চিকিৎসা সেবা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। আবার চিকিৎসক থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে রোগীদের।
জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জনের বিপরীতে ৯ জন চিকিৎসক থকলেও ৩ জন দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। সার্জারি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক না থাকায় বছরের পর বছর ধরে অপারেশন থিয়েটারে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে অর্ধ কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি।
এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ না থাকায় বাইরে থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় রোগীদের। এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাচোলবাসী। বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ করে নিঃস্ব হচ্ছেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো।
নাচোল উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ। এছাড়াও সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিকটবর্তী হওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী গোমস্তাপুর ও নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আব্দুস সামাদ জানান, বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগ মিলে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, বেশ কিছু রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন।
জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের উন্নয়ন ও শয্যাসংখা বৃদ্ধির পাশাপাশি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ঠিকই; কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক জুনিয়র কনসালটেন্ট পদায়ন না করায় চিকিৎসা সেবার কোনো উন্নয়ন ঘটেনি।
৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল কাঠামোতে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চলতি বছরের কর্ম তালিকায় দেখা যায় চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৯ জন। তার মধ্যে ডা. এ.এফ.এম আজিম আনোয়র সহকারী সার্জন (কোড নং- ১৪১৭৪৯) চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি যোগদান করলেও তিনি অনুপস্থিত থাকেন। এছাড়াও ৩টি ইউনিয়ন সাবসেন্টারে ৩ জন সহকারী সার্জনের পদ থাকলেও ২টি পদ শূন্য রয়েছে এবং একটিতে ডা. সাদিয়া রহমান (কোড নং-১৪৫৮৬৯) যোগদান করলেও তিনি প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া সার্জারি, গাইনি, অর্থোপেডিকস, কার্ডিওলজি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন বিভাগ থাকলেও এসব পদে কোনো চিকিৎসক নেই। এছাড়া পরিসংখ্যানবিদ, সহকারী নার্স, মেডিকেল টেকনলোজিস্ট (ফিজিওথেরাপি), হেলথ এডুকেটর এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্র্রেণীর ২৫ জন কর্মচারীও নেই।
অপর দিকে জরুরি উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালের রোগী স্থানান্তরের জন্য অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে মাত্র একটি। আবার জ্বালানি তেল সরবরাহ না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ঠিকমতো পাচ্ছেন না রোগীরা।
এ ব্যাপারে মেসার্স হোসেন পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদের বলেন, গতবছর মে মাস থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহ বাবদ ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩ টাকা বকেয়া রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদাপত্র দেয়া হলেও বকেয়া পরিশোধ না করায় জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এসব বিষয়ে সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মিজানুর রহমান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে হাসপাতালের বিদ্যমান সংকট উত্তরণে চেষ্টা করব।
এ অবস্থায় নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন, অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো এবং ডায়াগনস্টিক বিভাগের আধুনিকীকরণসহ অপারেশন থিয়েটার চালুর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন নাচোলবাসী।