নওয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়নি, পরবর্তী শুনানি ৯ অক্টোবর

476

তিনটি দুর্নীতির মামলায় এনএবি কোর্টে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দ্বিতীয় দিনের হাজিরায়ও তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ গঠন করা হয়নি। মামলার সব অভিযুক্তের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করার জন্য নওয়াজের আইনজীবীর পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানোর পর তা মুলতবি করা হয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ৯ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ওইদিনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো নওয়াজ এনএবি কোর্টে হাজির হলেও এদিন পরিবারের অন্য অভিযুক্ত সদস্যরা আদালতে হাজির হননি। আদালতে শুনানি চলার সময় নওয়াজের দল পিএমএল-এন এর আইনজীবী যুক্তি দেখান, অভিযোগ গঠনের আগে ওই নির্দিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত সবাইকেই আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়। পরে গতকাল সোমবার আর নওয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি।
এদিকে আদালতে হাজির না হওয়ার কারণে নওয়াজের তিন সন্তান ও জামাতার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
পিএমএল-এন এর আইনজীবী খাজা হারিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতে হাজির হওয়া নিয়ে নওয়াজের সন্তানদের কোনও সমস্যা নেই। তাদের মায়ের অসুস্থতার কারণে তারা আদালতে হাজির হতে পারেননি। তারা সবাই লন্ডনে আছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল সাংবাদিকদেরকাছে অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট সংখ্যক পিএমএল-এন এর নেতা ও সংবাদকর্মীদেরকে নওয়াজের সঙ্গে আদালতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পিএমএল-এন নেতা, আইনজীবী ও নওয়াজের সমর্থকদেরকে আদালতে প্রবেশে বাধা দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে রেঞ্জারের প্রধান আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত পিএমএল-এন নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদেরকে ভেতরে যেতে বলেন। তবে আদালতে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন আহসান ইকবাল। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এ ঘটনার তল খুঁজে বের করবেন এবং সংবাদকর্মী ও পিএমএল-এন নেতাদের আদালতে প্রবেশের সুযোগ না দেওয়ার জন্য কে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে তাও বের করবেন।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এনএবি কোর্টে হাজির হয়েছিলেন নওয়াজ। প্রথম দিন আদালতে হাজির হয়ে স্ত্রীর অসুস্থতার কথা জানিয়েছে নওয়াজ বলেছেন তাকে স্ত্রীর কাছে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিরে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। পরে ২ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারিত হয়।
৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে দুনিয়ার প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং রাঘববোয়ালদের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেয় আলোচিত ‘পানামা পেপারস’। ফাঁস হওয়া ওই গোপন নথিতে অর্থ পাচারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলের নাম উঠে আসায় নিজ দেশে চাপের মুখে পড়েন তিনি। বিরোধী দলগুলো থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে অবৈধ বিনিয়োগের অভিযোগ তদন্তে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পানামা পেপারস প্রকাশের পর বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত দেয় আদালত। গত ২৮ জুলাই পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। এরপর তার আসনটি শূন্য হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর শূন্য আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পিএমএলএন-এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পান নওয়াজের স্ত্রী কুলসুম। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই তার গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং নওয়াজ তাকে দেখতে যান। অবশ্য পিএমএল-এন জানিয়েছে,কুলসুমের ক্যান্সার আরোগ্যযোগ্য।