দেশে ‘সুগার বিট’ থেকেই হবে চিনি

432

আখ নয়, আগামী বছর থেকে দেশেই উৎপাদন হবে সুগার বিট থেকে নিরাপদ চিনি।  তিন বছর পরীক্ষা চালিয়ে এ বছর ব্যবসায়ীকভাবে সিরাজগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শুরু হচ্ছে সুগার বিট চাষ।  আগামী বছরই এই সুগার বিটের চিনি বাজারে ছাড়া হবে।

বাংলাদেশ বিট সুগার মিলস লিমিটেড ইতালির একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে এরই মধ্যে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় একটি সুগার মিল স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ বিট সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মু. আব্দুস ছালাম বলেন, আশা করি আগামী বছরই এই চিনি বাজারে ছাড়া সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, এ বছরের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সুগারবিটের বীজ বপন শুরু হবে। ৫ মাস পর ২০২০ সালের এপ্রিলের শুরুতে সুগার বিট তোলার কাজ শুরু হবে।  ওইদিনই মেশিনে দেওয়া হবে।  ওই দিনই চিনি উৎপাদন হবে এবং একদিনে তা বাজারে দেওয়া হবে।

১ এপ্রিল থেকে শুরু করে জুন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ক্ষেত থেকে সুগার বিট তুলে চিনি উৎপাদন করা হবে।  একটি মিলে বছরে ১০০ দিন পর্যন্ত চিনি উৎপাদনে মেশিন চলবে। এই একটি মিল থেকে বছরে প্রায় ১৩০০ টন চিনি, প্রায় ১৩০০ টন পশুখাদ্য, প্রায় ১৩০০ টন জৈবসার এবং প্রায় ১০০ সিবিএম বায়োগ্যাস পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, আখ ১৪ মাসের ফসল এবং ১০০ কেজি আখ থেকে চিনি হয় মাত্র ৬ কেজি এবং আখের ছোবরাকে শুধু রান্নাঘরে জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করা হয়।

অপরদিকে, সুগারবিট মাত্র ৫ মাসের ফসল এবং ১০০ কেজি সুগারবিট থেকে চিনি হয় প্রায় ১৪ কেজি। সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন করার পর এর পাল্প পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয় এবং এর পাতাও সবুজ শাক, সবুজ সার এবং পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়।

বাংলাদেশ বিট সুগার মিলস লিমিটেড ২০১৬ সাল থেকে সুগারবিট চাষ করে নানা দিক পরীক্ষা করেছে।  ২০৩০ সালের মধ্যে চরাঞ্চল, লোনাঞ্চল, খারাঞ্চল, অনুর্বর, পতিত ৩ লাখ হেক্টর জমিতে সুগারবিট চাষ করে প্রায় ২৩ লাখ টন চিনি, ২৩ লাখ টন পশুখাদ্য, ২৩ লাখ টন জৈবসার এবং হাজার হাজার সিবিএম বায়োগ্যাস উৎপাদন হবে বলে জানান মু. আব্দুস ছালাম। তিনি বলেন, আমি নিজেও বাসায় চাষ করা সুগার বিটের চিনি খাই।

যাচাই করার জন্য চাষ করে যখন নিশ্চিত হলেন যে, এটা ব্যবসায়ীকভাবে করা সম্ভব তখনই তিনি বড় পরিসরে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি জানান, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা বা যেসব অঞ্চলে মাটি ও পানিতে লবন বেশি সেসব এলাকায় সুগার বিট চাষ করা যায়। সেই এলাকায় মিল করা সম্ভব।  ক্ষেতের পাশেই মিল করতে পারলে ভালো হয়। একটা মিলের চালানো জন্য ৫০০ হেক্টর জমির সুগার বিট প্রয়োজন।

চাহিদা অনুযায়ী আমাদের দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন চিনি প্রয়োজন। এর মধ্যে উৎপাদন হয় মাত্র ৬০ হাজার টন। অবশিষ্ট প্রায় ১৯ লাখ ৪০ হাজার টন আমদানি করতে হয়।

মু. আব্দুস ছালাম বলেন, এতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে যাচ্ছে। অপরদিকে, সুগারমিলগুলো চালাতে সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে।