দেশের প্রথম ডিজিটাল দ্বীপ হিসেবে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

329

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলাকে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল’ দ্বীপ হিসেবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দ্বীপের মানুষ আরো উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ পাবে, চিকিৎসার সুযোগ পাবে। তাদের কর্মসংস্থানের সুবিধা হবে। আর দ্বীপে বসেই বিশ্বটা তাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে। সারা বিশ্বকে তারা জানতে পারবে, দেশে-বিদেশে যোগাযোগ রাখতে পারবে। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন। পরে একই স্থান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ‘পোর্ট এক্সপো-২০১৭’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন এবং কোরিয়ান একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে মহেশখালীকে ডিজিটাল দ্বীপ হিসেবে রূপ দেওয়া হয়েছে। এটিই বাংলাদেশের প্রথম দ্বীপ এলাকা, যেখানে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হলো। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহেশখালীর এই আধুনিকায়নের ফলে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা দ্বীপের প্রত্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো আরো সহজ হবে। মহেশখালী ছাড়াও আরো যেসব বিচ্ছিন্ন এলাকা আছে, সেগুলোতে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা প্রায় কার্যকর করে ফেলেছি। এখন এর আরও উন্নয়ন করতে হবে। দেশের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো ডিজিটাল করে দেওয়া হবে। কোরিয়া টেলিকমের গিগা ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহেশখালীতে উচ্চগতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এতে সেখানে ইন্টারনেটনির্ভর সেবার পরিধি বৃদ্ধি পাবে এবং অনলাইনে বিভিন্ন জনসেবা দেওয়া দ্বীপে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শেখ হাসিনা বলেন, এই দ্বীপে বসে এখন বিশ্বটা হাতের মুঠোয় চলে আসবে। আমাদের এই অঞ্চলটা বিশাল সম্পদের ভা-ার। কিন্তু, আমরা তা কাজে লাগাতে পারি নাই। চর ও হাওরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের দ্রুত উন্নয়নের সরকারের লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোরিয়া থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কোরিয়া টেলিকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান চ্যাং গিউ হোয়াং এবং মহেশখালী থেকে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বাংলাদেশে আইওএমের মিশন প্রধান শরৎ চন্দ্র দাস বক্তব্য রাখেন। এর আগে ডিজিটাল মহেশখালীর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। মহেশখালীর বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রশীদা বেগম এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীসহ চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল মহেশখালী প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ওই অঞ্চলের চিকিৎসা সেবা আরও সহজ হবে। উদ্বোধনীর সময় বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং মহেশখালীতে বাংলাদেশে আইওএম কর্মকর্তা পেপ্পি সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ‘পোর্ট এক্সপো-২০১৭’-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোও এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এই বন্দরের সুনাম যাতে অক্ষুণœ থাকে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এটাকে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আমি মনে করি, এটা অত্যন্ত জরুরি। সেদিকে লক্ষ রেখে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের বড় সম্পদ। এ বন্দরকে উন্নত-আধুনিক করতে ও সক্ষমতা বাড়াতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এসময় তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম বাড়াতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় প¦ার্শবর্তী দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের এ বন্দর ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এরমধ্যেই ভারত, নেপাল, ভুটান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর আরও সমৃদ্ধ হবে। এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, মোস্তাফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। বিদেশিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে প্রথমবারের মতো এই পোর্ট এক্সপো’র আয়োজন করা হয়েছে। এক্সপোতে বাংলাদেশের সকল বন্দর, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল সংস্থা, বন্দর ব্যবহারকারী, স্টেকহোল্ডার, ব্যবসায়ী সংগঠন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো অংশ নিচ্ছে। ১২৮টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পোর্ট এক্সপোর থিম নির্ধারণ করা হয়েছে পোর্ট প্রোডাক্টিভিটি প্রোসপারিটি বা বন্দরেই সমৃদ্ধি। কারণ বন্দরের মধ্যেই দেশের সমৃদ্ধি লুকায়িত। পরে চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। আজ শুক্রবার বিকেলে এক্সপো’র সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।