দেশসেরা জাভেদের এসএ গেমসে সোনা জয়ের স্বপ্ন

693

মাহবুব-মানসের বলয় ভাঙার পর নতুন স্বপ্ন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান জাভেদ আহমেদ। জাতীয় টেবিল টেনিসের পুরুষ বিভাগের নতুন এই চ্যাম্পিয়নের দৃষ্টি এখন এসএ গেমসে।
গত ১১টি বছর পুরুষ এককের শিরোপা মাহবুব বিল্লাহ জিতেছেন ছয়বার, মানস চৌধুরী পাঁচবার। এবারও লড়াইয়ে ছিলেন দুজনে কিন্তু তাদের ছিটকে দিয়ে শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে ওঠেন জাভেদ ও রিয়াজ মাহমুদ রকি। সোমবার বেস্ট অব সেভেন সেটের লড়াই জাভেদের জয়টি ৪-২ ব্যবধানের। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ২২ বছর বয়সী এই তারকা জানালেন এসএ গেমসে সোনা জয়ের লক্ষ্যের কথা।
হঠাৎ করেই একদিন নড়াইল টেবিল টেনিস ক্লাবে গিয়েছিলেন। ছোট বল আর র‌্যাকেটের খেলাটা মনে ধরে গেল। সেই থেকে নিয়মিত ক্লাবের ঢু মারা। হাতেখড়িও হয়ে গেল একদিন। শুরুতে খেলায় মজে যাওয়ায় পড়াশুনা উঠতে বসেছিল শিকেয়। পরিবার থেকে এলো বাধা। কিন্তু সব সামলে নিয়ে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে লাগলেন জাভেদ।
“বাসা থেকে একদিন নড়াইল টেবিল টেনিস ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিল। অনেক খেলোয়াড়ই ওখান থেকে উঠে এসেছে। শুরু থেকেই খেলাটা ভালো লেগেছিল। নিয়মিত সেখানে যেতাম। কিন্তু একটা সময় বাসা থেকে নিষেধ করত পড়াশুনার সমস্যা হওয়ায়। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে আমি ঠিকই যেতাম। সেই থেকে টিটির প্রতি ভালোবাসার শুরু। তখন বয়স আর কত হবে? নয় বা দশ বছর।”
“মোস্তফা ভাই (বিকেএসপির কোচ) বলতেন টিটিতে তুমি ভালো করবে-চালিয়ে যাও। এরপর এসএসসি পাস করে ঢাকা এলাম। মাইলস্টোন কলেজে এইচএসসি পড়লাম। নড়াইল থেকে যখন ঢাকা এসেছি, তখন বিমান বাহিনীর হয়ে খেলেছি, ওরাই আমাকে সব খরচ দিয়েছে। আমি সেই থেকে টিটিকে সিরিয়াসলি নিই। ২০১২ সালে জুনিয়রে রানার্সআপও হলাম।”
দুজনের সঙ্গে বয়সের ব্যবধান অনেক। কিন্তু শুরু থেকেই মাহবুব ও মানস স্নেহে-শাসনে আগলে রেখেছেন। নিঃস্বার্থভাবে দিয়েছেন টিপস। এবার তো গতবারের চ্যাম্পিয়ন মাহবুবকে সেমি-ফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন জাভেদ। শিরোপাটা তাই পূর্বসূরিকেই উৎসর্গ করেছেন ২২ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়।
“দুজনে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এই শটটা ভুল হয়েছে, এই শটটা খেলা যাবে নাৃএমন অনেক টিপস দিয়ে তারা সহযোগিতা করেছেন। ভালো করার উৎসাহ দিয়েছেন।”
দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের টেবিল টেনিসে বাংলাদেশ এখনও সোনা জিতেনি। সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ব্রোঞ্জই। গতবারও মেয়েরা জিতেছিল দলগত ব্রোঞ্জ। অধরা স্বর্ণ ২০১৯ সালের কাঠমান্ডুর আসরে জিততে চান জাভেদ।
“এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। জুনিয়রদের এসএ গেমসে ২০১২ সালে ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। এবার লক্ষ্য নেপালের এসএ গেমস থেকে যেন দেশকে সোনা এনে দিতে পারি।”
চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট জাভেদ। টিটির পাশাপাশি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশে (আইইউবি) মার্কেটিং বিভাগে পড়াশোনাও চলছে। জাতীয় টিটিতে খেলার জন্য এবার চতুর্থ সেমিস্টার ড্রপ দিয়েছেন তিনি। খেলার প্রতি শিষ্যের এই নিষ্ঠায় মুগ্ধ কোচ মোহাম্মদ আলি। তারও বিশ্বাস, অনুশীলনের সুবিধা ঠিকঠাক পেলে জাভেদের হাত ধরে আসবে সাফল্য।
“এবারের প্রতিযোগিতা নিয়ে জাভেদের মনোযোগ ছিল ভীষণ। নিবিড় অনুশীলন করেছে। এমনকি এই টুর্নামেন্টের জন্য সে সেমিস্টার ড্রপ দিয়েছে! ওর চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও আমাদের টিটির জন্য ভালো সংবাদ।”
“এখন ওর জন্য দরকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। ভারতের কথাই ধরুন, ওদের অনেক খেলোয়াড় বিদেশে নিয়মিত অনুশীলন করে; ক্যাম্পও করে কোরিয়া-জাপানে। যদি এ ধরনের সুবিধা জাভেদদের দেওয়া যায়, তাহলে আমার বিশ্বাস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য আসবে।”