দেরি নয় মেরুদন্ডের সমস্যায়

488

পুরুষের তুলনায় নারীদের যেমন মেরুদে-ের সমস্যা বেশি হয় তেমনি ব্যথার তীব্রতাও থাকে বেশি। এর অন্যতম কারণ হল, এই উপমহাদেশের নারীরা সহজের ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। আর যখন যায় তখন সমস্যা অনেক প্রকট আকার ধারণ করে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই গবেষণার গবেষক, ভারতের আন্ধেরিতে অবস্থিত কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতালের স্পাইন সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ভিশাল পেশাত্তিওয়ার বলেন, “সিংহভাগ নারীই মেরুদ-ের সমস্যায় ভোগেন এবং অনেক দিন ধরেই সমস্যা বয়ে বেড়ান। তবে একবারে শয্যাশায়ী না হওয়া পর্যন্ত তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। আমি নিজেও রোগীর মুখে শুনি যে, ঘরের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি। একজন রোগী এসেছিলেন যার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তবে তার স্বামী জানালেন অস্ত্রোপচারের খরচ যোগাড় করতে কমপক্ষে একবছর অপেক্ষা করতে হবে।”
ঢাকায় অবস্থিত জেড. এইচ সিকদার উইমেন্স মেডিকাল কলেজের ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং পিপলস পেইন ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিকের প্রধান কনসালটেন্ট ডা. শিবলী নোমানী বলেন, “আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই সমস্যার হার নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রায় সমান। পুরুষরা সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসেন। তবে নারীরা, বিশেষ করে গৃহিনীরা আসেন অনেক দেরিতে।”
“এখানে উল্লেখ্য বিষয় হল মেরুদ-ের সমস্যা দেখা দেওয়ার দুতিন মাসের মধ্যে আসলে তা সারানো সম্ভব হয়। তবে নারীরা এই ব্যথাকে অবহেলা করে। ব্যথার ওষুধ খেয়ে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কাটিয়ে দেন। এরপর যখন কোনো কিছুতেই কিছু হয় না তখন আসেন আমাদের কাছে। ততক্ষণে তার চিকিৎসা আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।”
ডা. পেশাত্তিওয়ারের মতে, “মেরুদ-ের সমস্যা সারানোর জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের জন্য পুরুষের তুলনায় নারীকে অপেক্ষা করতে হয় বেশি- যা এই গবেষণার প্রধান উদঘাটন।”
তিনি বলেন, “গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ নারী মেরুদ-ের সমস্যার উপসর্গ বয়ে বেড়িয়েছেন পাঁচ বছর। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ এতে ভুগছেন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। পুরুষের অপেক্ষার পরিমাণ কম, ৯০ শতাংশ পুরুষই সমস্যায় ভুগেছেন পাঁচ বছরেরও কম সময়।”
আর্থিক দিক থেকে আমাদের দেশের অবস্থা প্রায় একই রকম, বলেন ডা, শিবলী নোমানি।
তিনি বলেন, “মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা সংসারের মায়ার টানে তার সমস্যার কথা গোপন রেখেছেন, এমন অনেক রোগী পাই আমরা। আবার শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে যখন আসেন তখন অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি থাকে না। আর তার খরচ যোগাতেও এই পরিবারগুলো হিমশিম খেয়ে যান। ফলে অস্ত্রোপচারের দিন পিছিয়ে যেতে থাকে।”
ভারতের জেজে হসপিটাল’য়ের অর্থপেডিক বিভাগের প্রধান ডা. একনাথ পাওয়ার বলেন, “অস্ত্রোপচার করাতে আসা নারী-পুরুষদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনও তফাৎ আমি খুঁজে পাই না। তবে, নারীদের মধ্যে ব্যথা সহ্য করেও কাজ করে যাওয়ার প্রবণতা আছে। বিশেষ করে গৃহিনীদের। পুরুষের মেরুদ-ের সমস্যা হয় প্রধানত দুর্ঘটনা থেকে। আর এ ব্যাপারে তারা বেশ সতর্ক, অস্ত্রোপচার করিয়ে নেন দ্রুত।”
“বরং দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে রান্না করা, নিচু হয়ে ঘর ঝাড়ু দেওয়া, মেঝেতে বসে কাটাকুটির কাজ করা ইত্যাদি নারীদের মেরুদ-ের জন্য বড় শত্রু। আর বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে সন্তানকে বসে খাওয়ানো, নিচু হয়ে শিশুকে কোলে নেওয়া, দীর্ঘসময় সন্তানকে কোলে নিয়ে হাঁটা কিংবা কোলে রেখে কাজ করা ইত্যাদি কারণ অন্যতম।”
ডা. পেশাত্তিওয়ার বলেন, “কিছু নারীর মেরুদ-ের সমস্যার কারণ হয় ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম, ব্যায়াম ইত্যাদির অভাব। বিশেষ করে সন্তান প্রসবের পর, যা তাদের দূর্বল করে দেয়।”
ভারতের ‘কি চেইন অফ স্পাইন কেয়ার ক্লিনিক’য়ের কর্ণধার নিথিজ আরিনা বলেন, “গর্ভধারণ কারণে মেরুদ-ের সমস্যায় আক্রান্ত হয় অসংখ্য নারী। আবার সন্তান প্রসবের সময়ে রোগের সুত্রপাত হয়। নারীর ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণে তারা শারীরিকভাবে অক্ষম না হওয়া পর্যন্ত রোগ বয়ে বেড়ান। নারী রোগীদের গড় বয়স ৩৬ বছর, তবে বর্তমানে আরও কম বয়সি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।”
এই কারণে মেরুদ-ে ব্যথা অনুভূত হলে যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন ডা. নোমানি। কারণ রোগ বয়ে নিয়ে বেড়ালে সমস্যা তো বাড়বেই পাশাপাশি পরে চিকিৎসায় খরচের পরিমাণও বাড়বে।