Site icon রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন গাজার সকল মানুষ

টানা পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় আকাশ ও স্থলপথে হামলা করে চলেছে ইসরায়েল। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, গাজার সকল মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে সহায়তা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি।

গতকাল রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ২০ লাখ মানুষ ‘তীব্র মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ সম্মুখীন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে বিবিসি এই অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একথা বলেন।

এমন অবস্থায় যাদের সহায়তা প্রয়োজন তাদের সহায়তা প্রদানকে অগ্রাধিকার দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন।জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলেছে, চলমান যুদ্ধে এখনই বিরতি এবং সাহায্য বিতরণের পরিমাণ না বাড়ানো হলে আগামী মে মাসের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চল দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে পারে।

বিবিসি বলছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ফিলিপাইন সফরের সময় গাজা নিয়ে এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যেও সফর করবেন। আর সেটি হবে গত বছরের অক্টোবর থেকে এই অঞ্চলে তার ষষ্ঠ দফা সফর। এছাড়া এই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে দেশটি।

এমন অবস্থায় যুদ্ধ থামাতে, মানবিক সহায়তার বিতরণ এবং ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির জন্য হামাসের সাথে একটি চুক্তিতে সম্মত হতে মঙ্গলবার কাতারে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের আলোচনা আবার শুরু হওয়ার কথা ছিল।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং বৃহত্তম সামরিক সাহায্য প্রদানকারী দেশ। আর গাজায় মানবিক সংকটের মাত্রা উল্লেখ করতে ব্লিংকেনের এই মন্তব্য ছিল তার অতীতের যেকোনও সময়ের মন্তব্যের তুলনায় সবচেয়ে কঠোর।

ব্লিংকেন বলেন: ‘গাজার জনসংখ্যার শতভাগ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রথমবারের মতো সমগ্র জনসংখ্যাকে এভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।’

যখন একজন ব্যক্তির পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণে অক্ষমতা তার জীবন বা জীবিকাকে তাৎক্ষণিক বিপদে ফেলে, তখন তাকে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বলে। যদি এই সংকটের সুরাহা না করা হয়, তবে এই অবস্থা মানুষকে অনাহারের দিকে নিয়ে যায়।

ব্লিংকেন আরও বলেন, ‘আমরা আবারও দেখতে পাচ্ছি, জাতিসংঘের মতে, এই ক্ষেত্রে জনসংখ্যার শতভাগ মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। সুদানের সাথে তুলনা করুন, সেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন; আফগানিস্তানে, এটি প্রায় ৭০ শতাংশ। সুতরাং, আমাদের শুধুমাত্র এটিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি এবং অপরিহার্য।’

এসময় তিনি আবারও হামাসকে অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু মার্কিন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যাদের মানবিক সহায়তার নিদারুণ প্রয়োজন তাদের হাতে তা অগ্রাধিকারভিত্তিতে পৌঁছে দেওয়া ইসরায়েলের দায়িত্ব।এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার বিপর্যয়কর ক্ষুধা ‘মানবসৃষ্ট এবং… সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য’।

আর এর পেছনে ভলকার তুর্ক ‘মানবিক সহায়তা এবং বাণিজ্যিক পণ্যের প্রবেশ ও বিতরণে ব্যাপক বিধিনিষেধ, বেশিরভাগ মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং সেইসাথে গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস’ করায় ইসরায়েলকে দৃঢ়ভাবে দোষারোপ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের বিধিনিষেধ ‘যুদ্ধের পদ্ধতি হিসাবে অনাহারকে ব্যবহার করার সমান হতে পারে, যা একটি যুদ্ধাপরাধ’।

Exit mobile version