তিন শিশুর জন্ম দিয়েও খুশি নেই তাজরিন

112

তিন শিশুর জন্ম দেয়ার আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে মা তাজরিনের। পাশাপাশি শিশুদের দুধের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে পরিবারও অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের চাপা আর্তনাদে বেদনার্ত বুক আরো ভারী হয়ে উঠেছে। নিরুপায় হয়ে শিশু তিনটিকে বাঁচাতে তাই সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে পরিবার।
বিশোর্ধ্ব তাজরিন থাকেন বাবার বাড়িতেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটীর পেশায় অটোচালক বাবুল ইসলাম (৫৬) তার বাবা। আর স্বামী মাসুদ রানা বিদেশ যাওয়ার জন্য দালালকে টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন। তার আয় দিয়ে সংসার চালানোয় কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে শিশুদের দুধের জোগাড় বহুদূরের পথ।
জানা গেছে, বাবুল ইসলামের তিন মেয়ে। তিন মেয়েরই বিয়ে দিয়েছেন। তাজরিন সবার ছোট। ২০১৭ সালে পার্শ্ববর্তী হেলালপুরের (টিকটিকি পাড়া) মাসুদ রানার সাথে বিয়ে হয় তাজরিনের। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আল্ট্রসনোগ্রাম করে জানা যায় তাজরিনের পেটে তিন বাচ্চা। ধারদেনা করে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ১৫ জানুয়ারি রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজার করা হয় তাজরিনের। একসঙ্গে জন্ম দেন দুই মেয়ে ও এক ছেলের। তিন শিশুর মুখ দেখে মায়ের মন আনন্দে নেচে উঠলেও ভবিষ্যৎ কল্পনা করে শিউরে উঠেন তাজরিন। শিশুদের সুস্থভাবে লালন-পালনের চিন্তায় মুষড়ে পড়েন তাজরিনসহ তার পরিবার। একে তো স্বামীর তেমন আয়-রোজগার নেই, বাবাও অটোচালক। খরচ কুলোবে কোথ থেকে।

শনিবার বিকেলে সরেজমিন কথা হয় তাজরিনের বাবা বাবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, তিন মেয়েরই বিয়ে দিয়েছেন। বড় মেয়ে দুটির স্বামীর সংসার কোনোরকমে চলে। ছোট মেয়ে তাজরিনের বাচ্চা ডেলিভারির জন্য অনেক টাকা ধারদেনা করতে হয়েছে। এখন শিশুগুলোর দুধের জোগান দিতে গিয়ে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাবুল বলেন, অটোরিকশা চালিয়ে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। আর বাচ্চাদের প্রতিদিন ৪০০ গ্রামের কৌটার দুধ কিনতে লাগে ৫৮০ টাকা। করুণ চোখে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘বলেন, শিশুদের জন্য দুধ কিনব, না সংসার চালাব। তাই নিতান্ত অসহায় হয়ে সমতা নারী উন্নয়ন সমিতির সভাপতি আকসানা খাতুনের সহযোগিতায় কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।’
শিশু তিনটিকে মানুষ করতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের কাছেও সহযোগিতায় চেয়েছেন অসহায় নানা বাবুল।