তাপপ্রবাহ আরও পাঁচদিন, বাড়তে পারে ভ্যাপসা গরম

73

দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ আগামী চার থেকে পাঁচ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে ভ্যাপসা গরম বাড়তে পারে। ফলে বাড়তে পারে অস্বস্তি।  সোমবার (৫ জুন) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বাভাস বলছে, ইতোমধ্যে দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত হওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তাপপ্রবাহের মধ্যে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে ভ্যাপসা গরম আরও বাড়বে। তাপপ্রবাহের ফলে গরমে শরীরে যে ঘাম হয়, জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে সেই ঘাম বাতাস শুষে নিতে পারে না। ফলে শরীরে তাপ না কমায় বাড়ে গরম অনুভূতি। আবহাওয়াবিদরা আগেই জানিয়েছেন, চলতি বছর গরমে অস্বস্তি বাড়তে পারে। কেননা, শুরু থেকে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু কম হওয়ার কারণে তাপপ্রবাহের মাত্রা ও বিস্তার বেশি ছিল। গত এপ্রিলেও তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড পরিমাণ।

মাঝে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বৃষ্টিপাতের দেখা মিললেও ফের তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে দেশবাসীকে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, জুনেও স্বস্তি মিলবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. তৌহিদা রশিদ বলেন, এবারে তাপপ্রবাহ যদি খেয়াল করেন, দেখবেন লম্বা সময় ধরে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এমন কিন্তু প্রতি বছর হয় না। হয়তো বিরতি দিয়ে দিয়ে হয়।

তিনি বলেন, গত ১০ মাসে সারা পৃথিবীর তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। চলতি বছর ১ দশমিক ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। কাজেই এবারের তাপপ্রবাহের পেছনে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের (বৈশ্বিক উষ্ণায়ন) প্রভাব রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরের (পেরুর কাছের অংশে) পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ওপর সারা পৃথিবীর আবহাওয়া নির্ভর করে। সেখানে তাপমাত্রা বেশি থাকলে আমরা তাকে এল নিনো বলি। আর তাপমাত্রা কম থাকলে বলা হয় লা নিনা।

এই আবহাওয়া বিজ্ঞানী বলেন, আমরা এখন এল নিনো ফেজে ঢুকছি। আগামী জুন-জুলাই মাসে পুরোপুরি এই ফেজে ঢুকে যাবো। এই অবস্থা কখনো তিন বছর, কখনো পাঁচ বছর কখনো আবার সাত বছর স্থায়ী হয়। অর্থাৎ ওইদিকে ঠান্ডা বেশি থাকলে এশিয়ার এই দিকে গরম বেশি থাকে। এই প্রক্রিয়াটা তিন থেকে সাত বছর ঘুরে ফিরে স্থায়ী হয়।

জুনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রোববার (৪ জুন) রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে, ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল আগের নয় বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঈশ্বরদীতে, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০১৪ সালের মে মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত ১৬ এপ্রিল আগের ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ১৯৭৫ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এই রেকর্ড এখনো ভাঙেনি।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষা টেকনাফ উপকূলে পৌঁছাতে পারে। সেক্ষেত্রে বাড়বে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা। এই সময় জুড়ে তাপপ্রবাহের সঙ্গে থাকবে ভ্যাপসা গরমও। তবে কোথাও কোথাও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে সাময়িকভাবে কমবে গরম অনুভূতি।