ঢাকায় গাছের অক্সিজেন যোগান ৫ শতাংশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশুদ্ধ বাতাস ও অক্সিজেন মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা বর্তমানে মারাত্মক বায়ুদূষণ ও অক্সিজেন ঘাটতির মুখোমুখি। একদিকে শহরজুড়ে গাছ কাটা ও নির্মাণকাজ চলছে ব্যাপকভাবে, অন্যদিকে ধূলিকণা, ধোঁয়া, ও বিষাক্ত গ্যাসে ঢাকার বাতাস হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। ফলে নগরবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার আয়তন প্রায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ (২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য)। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর। জনঘনত্বের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ২৩ হাজার লোক বসবাস করে। ঢাকা শহরের প্রশাসনিক কাঠামো দুই ভাগে বিভক্ত। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়তন প্রায় ১৯৬.২২ বর্গকিলোমিটার এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়তন প্রায় ১০৯.২৫ বর্গকিলোমিটার। দুই সিটিতে (৫৪+৭৫) ১২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ১ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করলেও এই বিপুল জনসংখ্যার বিশুদ্ধ অক্সিজেন যোগান দেওয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত গাছপালা।
১৯১৭ সালের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, ঢাকা হবে একটি বাগানের শহর। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন ও জনসংখ্যার চাপে ঢাকা শহর থেকে সবুজ, মাঠ ও জলাশয় হারিয়ে গিয়েছে। ঢাকা নগরের আওতায় ছোট বড় মিলিয়ে মাত্র ৪৮টি উদ্যান ও প্রায় ২৫টি খেলার মাঠ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব উদ্যান দখল, অবহেলা বা অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে অকেজো হয়ে পড়েছে।
সরকারের বন বিভাগ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংস্থা ইউএস ফরেস্ট সার্ভিসের করা এক বৃক্ষ জরিপ (২০২০) থেকে জানা যায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ছোট–বড় প্রায় ১৩ লাখ গাছ রয়েছে। ১৩ লাখ গাছের মধ্যে ঢাকা উত্তরে রয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৬০০টি, আর ঢাকা দক্ষিণে আছে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ গাছ। ঢাকায় প্রতি সাতজনের বিপরীতে রয়েছে মাত্র একটি গাছ।
তথ্যে জানা যায়, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দৈনিক ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে। সেই হিসেবে মহানগরে প্রায় ১ কোটি মানুষের জন্য দৈনিক প্রায় ৫৫০ কোটি লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা মহানগরের গাছপালাগুলো মিলে দৈনিক যোগান দিতে পারে মাত্র ১৮ কোটি লিটার, যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৩-৫ শতাংশ। বাকি অক্সিজেন আসছে বাইরে থেকে অথবা উৎপাদনশীল গাছের পরিবর্তে কিংবা দূষণপূর্ণ বাতাস থেকে।
বাতাসে সাধারণভাবে প্রায় ২১ শতাংশ অক্সিজেন থাকে, যা শহর ও গ্রামের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য করে না। কিন্তু পার্থক্য হয় বাতাসের বিশুদ্ধতায়। শহরের বাতাসে ধুলাবালি, ধোঁয়া, ও বিষাক্ত গ্যাস বেশি মিশে থাকে, যা শ্বাস নেওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
দূষণের কারণ
অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, বহুতল ভবন, মার্কেট, কংক্রিট স্থাপনায় নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। ফলে সবুজায়ন কমছে, সেই সাথে অক্সিজেনের মাত্রা ও কমছে। ঢাকা ও এর আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা ও ফ্যাক্টরি থেকে পিএম ২.৫ (প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা-পিএম ২.৫) উপস্থিতিসহ বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে অক্সিজেন।
ঢাকার অক্সিজেন দূষণের প্রধান কারণ হলো মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়া, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি বায়ুতে মিশে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও দূরপাল্লার যানবাহনের ধুলা ও ধোঁয়ার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণের জন্য এখানকার বায়ু দূষিত হয়ে পড়ে।
মহানগর এলাকায় পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। খোলা ডাস্টবিন, লেক, পুকুর, ড্রেনেজের নর্দমা ও আবর্জনার পচনশীল গন্ধযুক্ত গ্যাস বাতাসে বিষ মিশিয়ে দেয়।
তাছাড়া দীর্ঘদিন খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজের সামগ্রী রাস্তায় পড়ে থাকা ধুলা বাতাসকে দূষিত করে পিএম ১০/পিএম ২.৫-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫ ও পিএম ১০-এর উপস্থিতি। এর ফলে প্রায় দিনই দূষিত তালিকায় রয়েছে ঢাকা। পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ হলো বাতাসে ভাসমান অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার মাপ। এই কণাগুলো মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে নানা ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
অক্সিজেন সংকটে স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশুদ্ধ অক্সিজেন সংকটে মানুষকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বৈশ্বিক বায়ুদূষণের ঝুঁকি বিষয়ক ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ। বায়ু দূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৭ সালে দেশে মারা গেছে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ।
সেন্টার ফর রিসার্চ অন অ্যানার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরআইএ) এক গবেষণার তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতি বছর পাঁচ হাজার ২৫৮ শিশুসহ এক লাখ দুই হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। একই কারণে প্রতি বছর নয় লাখ মায়ের অপরিণত গর্ভধারণ হচ্ছে এবং প্রায় সাত লাখ কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। আর এ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে প্রতিবছর ছয় লাখ ৭০ হাজার রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন যার ফলে সম্মিলিতভাবে বছরে ২৬ কোটি ৩০ লাখ কর্মদিবস হারাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় কম বায়ুদূষণের শিকার মায়েদের তুলনায় অধিক বায়ুদূষণে ভোগা মায়েদের ‘প্রিটার্ম বার্থ’ (সময়ের আগে জন্মদান) ও কম ওজনের বাচ্চা প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেশি।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) তথ্য মতে, দূষিত অক্সিজেনের অভাবে শিশুদের মধ্যে হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার হার বেড়েছে ২৮ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি ৩ গুণ বেড়েছে।
কর্মক্ষম মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন স্লিপ ডিসঅর্ডার, মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি ইত্যাদিতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, বায়ু দূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর ঢাকায় বায়ুদূষণে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্ট ডা. মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অভাবে মানুষ পালমোনারি হাইপারটেনশন, তীব্র শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, সিওপিডি ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। তবে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্বাসকষ্টের রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় জানতে চাইলে ডা. রিয়াজ বলেন, প্রথমত আমাদের ঘনবসতি এলাকাগুলোকে পরিকল্পনা মাফিক আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি ঢাকা শহরের ভেতরের কলকারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধবভাবে গড়ে তোলা। বেশি বেশি সবুজায়ন কর্মসূচি করতে হবে। কঠোর আইন প্রয়োগ করে কালো ধোঁয়া থেকে রাজধানীকে মুক্ত করতে হবে। তাহলেই আমরা বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাব। নগরের বাসিন্দারাও রোগমুক্ত থাকবে।
মহাখালী জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. এটিএম কামরুল হাসান বলেন, দূষিত বায়ু গ্রহণের ফলে ফুসফুস ক্যান্সার, প্রসাবের থলির ক্যান্সারসহ অনেক ক্যান্সার বাতাসে মিশ্রিত কার্সিনোজেন লেড, ক্রমিয়াম হয়ে থাকে।
এই রোগগুলো থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি এই তিন পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার করা, ধূমপান পরিহার, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে বনায়ন কর্মসূচি পালন এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দূষণের বিরোধী কর্মসূচির উদ্যোগ নিলে অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
বিশুদ্ধ অক্সিজেন সংকট থেকে উত্তরণে উপায়
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি দূষিত অক্সিজেন থেকে রক্ষা পেতে স্কুল- কলেজ ও করপোরেট এবং নাগরিকদেরও রয়েছে অনেক দায়িত্ব।
পরিত্যক্ত জায়গা, খালি প্লট ও রাস্তার পাশে গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। বেদখল মাঠ ও পার্ক ফিরিয়ে এনে খোলা জায়গা বাড়াতে হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন ও উদ্যান সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রতিটি ভবনের ছাদে গাছ লাগানোর আইন কার্যকর করতে হবে। ছাদবাগানের জন্য কর রেয়াত ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল ভিত্তিক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও শিশুদের পরিবেশ সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ে সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যস্ততম এলাকায় মানুষের হাঁটার পথে গাছের ছায়া ও তাজা বাতাস নিশ্চিত করতে হবে। উন্মুক্ত স্থানে প্লাস্টিক পোড়ানো, ধুলা ছড়ানো কিংবা অতিরিক্ত হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও রাস্তার ধুলো নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি পানিচালিত ক্লিনার ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব যানবাহন চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পোন্নত দেশের মতো ‘স্মার্ট অক্সিজেন জেনারেটর’ বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দৈনিক ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে। ঢাকা সিটিতে যে বিশাল সংখ্যক মানুষ বসবাস করে তার তুলনায় সবুজায়ন খুবই কম। গাছ আমাদের মোটেও এই পরিমাণের বিশুদ্ধ অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারে না। আমরা অক্সিজেন পাই বিভিন্ন মাধ্যমে। আর গাছের প্রকার ও আকৃতি অনুযায়ী গাছ কম বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।
তিনি বলেন, শুধু সবুজায়ন পরিবেশের বিশুদ্ধ অক্সিজেনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। গাছ কাটা, শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থপনা, ফিটনেসবিহীন ভেহিকেলের কালো ধোঁয়া ও রাস্তাঘাটের ধুলাবালি, ইট ভাটা নিয়ন্ত্রণ করলে রাজধানীর হিটওয়েব কমালে এমনিতেই বিশুদ্ধ অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যাবে। বায়ুদূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণে বায়ুর মান বা বায়ুর অক্সিজেন বৃদ্ধি পাবে। মানুষ বায়ু থেকে যে অক্সিজেন গ্রহণ করে তার পাশাপাশি পিএম ২.৫-সহ বিভিন্ন দূষিত পদার্থ আমাদের দেহে প্রবেশ করে, ফলে স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়।
এই পরিবেশবিদ আরও বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, রেগুলেটরি বডিগুলোর সুশাসনের অভাব, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অধিদপ্তরের সুশাসনের অভাব রয়েছে। সুশাসন শুধু নিশ্চিত করলে হবে না, এর বিকল্প ভাবতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি বাজার থেকে পলিথিন সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন, কিন্তু এর বিকল্প হিসেবেও আপনাকে ভাবতে হবে। একইভাবে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রথমে দূষণের কারণ আইডেন্টিটিফাই করতে হবে, পরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সরকারের কাছে ডাটা রয়েছে। কোন এলাকায় বায়ু দূষণ হয় এবং কী কারণে হচ্ছে, তা বের করে নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কীভাবে সবুজায়ন বৃদ্ধি পাবে জানতে চাইলে শরীফ জামিল বলেন, ঢাকা শহরে খালি জায়গা নেই বললেই চলে। তবে যেসব জলাশয়, উদ্যান, পার্ক রয়েছে, সেগুলো তাদারকির পাশাপাশি যত্ন নিতে হবে। যেটুকু খালি জায়গায় রয়েছে, সেখানে বৃক্ষরোপণ বা বনায়ন করতে হবে।
বিশুদ্ধ অক্সিজেন একটি মৌলিক অধিকার। শহরে যদি আমরা বিশুদ্ধ শ্বাস নিতে না পারি, তাহলে যত উন্নয়নই হোক, তা হবে ধ্বংসাত্মক। পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি সবাই মিলে রক্ষা করার দায়িত্ব। আমরা যদি এখনই উদ্যোগ না নেই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাব একটি বিষাক্ত শহর। যেখানে বিশুদ্ধ শ্বাস নেওয়াটাই হবে বিলাসিতা। এখনই সময়, ঢাকা মহানগরকে একটি ‘গাছবান্ধব শহর’ ঘোষণা করে, প্রকৃতিকে ফিরিয়ে আনার।