ডোমিনিকা টেস্টে নাটকীয় জয় পাকিস্তানের

447

বিফলে গেল রোস্টন চেইসের বীরোচিত লড়াই। ইয়াসির শাহর দারুণ বোলিংয়ে ডোমিনিকা টেস্টে নাটকীয় জয় পেয়েছে পাকিস্তান।
তৃতীয় ও শেষ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০১ রানে হারিয়ে মিসবাহ-উল-হক ও ইউনুস খানকে দারুণ এক উপহার দিয়েছে সতীর্থরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়।
২-১ ব্যবধানে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের মীমাংসা না হয়ে ড্রও হতে পারতো। মাত্র এক ওভার বাকি থাকতে ২০২ রানে অলআউট হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আগের ওভারে দারুণ বোলিংয়ে মোহাম্মদ আমির নিশ্চিত করেন পরের ওভারে স্ট্রাইকে থাকবেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।
ইয়াসিরের সেই ওভারের চার নম্বর বলে আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বাঁচেন গ্যাব্রিয়েল। পরের বলে সুযোগ এসেছিল সিঙ্গেল নেওয়ার, শেষ ওভারটি নিজে খেলে দিবেন ভেবেই হয়তো রান নেননি চেইস।
লেগ স্পিনারের শেষ বলটায় পাকিস্তানের সব ফিল্ডার ঘিরে ধরে গ্যাব্রিয়েলকে। চাপ কাটাতেই হয়তো সজোরো হাঁকাতে গিয়ে টেনে আনেন স্টাম্পে। বোল্ড স্বাগতিকদের ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান।
হতভম্ব হয়ে গেলেন গ্যাব্রিয়েল, বিশ্বাস হচ্ছিল না চেইসের। সেই রানটা না নেওয়ার জন্যই হয়তো আক্ষেপ করছিলেন। ম্যাচ বাঁচানোর এত কাছে গিয়ে হারতে হল। গ্যালারিতে এতক্ষণ বেজে চলা ড্রামের শব্দ মিলিয়ে গেল, মাঠে তখন অসাধারণ জয় উদযাপনে ব্যস্ত পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা।
সতীর্থদের কাঁধে চড়ে শেষবারের মতো মাঠ ছাড়লেন ইউনুস-মিসবাহ।
জয়ের জন্য রোববার উইন্ডসর পার্কে তৃতীয় ও শেষ টেস্টের পঞ্চম দিন পাকিস্তানের দরকার ছিল ৯ উইকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৯৭ রান। সিরিজে ইয়াসিরের তৃতীয় পাঁচ উইকেটে সেই লক্ষ্যে পৌঁছায় পাকিস্তান।
দিনের শুরুটা দারুণ ছিল অতিথিদের। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে আউট করে শুরু করেছিলেন ইয়াসির। মোহাম্মদ আমির ও হাসান আলিও তার সঙ্গে যোগ দিলে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ভিশাল সিং ও শেন ডাওরিচকে আউট করে স্বাগতিকদের ওপর চাপ বাড়ান ইয়াসির। ৯৩ রানে ৬ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াই শুরু করে সিরিজে তাদের সেরা দুই ব্যাটসম্যান চেইস ও জেসন হোল্ডারের ব্যাটে।
একশ রানের আগেই ছয় উইকেট হারানো স্বাগতিকরা জয়ের চেষ্টাইতেই যায়নি। চেইস-হোল্ডার মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকার দিকে মনোযোগী ছিলেন। হোল্ডারকে এলডব্লিউর ফাঁদে ফেলে প্রতিরোধ ভাঙেন অভিষিক্ত হাসান।
চেইসের লড়াই তখনও শেষ হয়নি। টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকেও পেয়েছেন দারুণ সহায়তা। ৩ রান করতে দেবেন্দ্র বিশু খেলেছেন ৪৫ বল, আলজারি জোসেফ ৩২ বল টিকেছেন, গ্যাব্রিয়েল ২২ বল।
ভাগ্যটাও পাশে পেয়েছিলেন চেইস। একবার হাসানকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বাঁচেন। আরেকবার মোহাম্মদ আব্বাসের ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে যান ক্যাচ দিয়েও।
বুক চিতিয়ে লড়াই করা অলরাউন্ডারকে দিন শেষে ফিরতে হয় হারের যন্ত্রণা নিয়ে। ২৩৯ বলে অপরাজিত ১০১ রান করতে ১২টি চারের সঙ্গে হাঁকিয়েছেন একটি ছক্কা।
৯২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার ইয়াসির। তরুণ পেসার হাসান ৩ উইকেট নেন ৩৩ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৭৬
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৪৭
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ১৭৪/৮ ইনিংস ঘোষণা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৯৬ ওভারে ২০২ (ব্র্যাথওয়েট ৬, পাওয়েল ৪. হেটমায়ার ২৫, হোপ ১৭, চেইস ১০১*, ভিশাল ২, ডাওরিচ ২, হোল্ডার ২২, বিশু ৩, জোসেফ ৫, গ্যাব্রিয়েল ৪; আমির ১/২২, আব্বাস ১/৩১, ইয়াসির ৫/৯২, হাসান ৩/৩৩, আজহার ০/৩, শফিক ০/১৫)
ফল: পাকিস্তান ১০১ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী পাকিস্তান
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রোস্টন চেইস
ম্যান অব দ্য সিরিজ: ইয়াসির শাহ