টেস্ট সিরিজের আগে আরেক টেস্ট

251

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের এক পাশের নেটে সাব্বির রহমানকে থ্রো ডাউন করছিলেন চন্দিকা হাথুরুসিংহে। হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে তাকালেন দূরে মাঠের অন্য প্রান্তের নেটে। কণ্ঠের সর্বোচ্চ জোর দিয়ে যেন চিৎকার করে বললেন, “সৌম্য, এই বলটা পেছনে গিয়ে ডিফেন্স করতে হবে।” এক পাশের নেটে থ্রো ডাউন করছিলেন হাথুরুসিংহে, তার সঙ্গে হাই পারফরম্যান্সের (এইচপি) কোচ মিজানুর রহমান। অন্য প্রান্তের নেটে বোলিং মেশিনে ব্যাটসম্যানদের অনুশীলন করাচ্ছিলেন এইচপির আরেক কোচ সোহেল ইসলাম। মাঠের মাঝখানেও সেন্টার উইকেটে দুটি নেটে চলছিল ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন। সঙ্গে চলছিল ইনডোরেও। চট্টগ্রামে জাতীয় দলের ক্যাম্পের প্রথম দিনের টুকরো টুকরো ছবি এসব। পাঁচ জায়গায় ব্যাটিং-বোলিং, পাশেই কিপিং আর ফিল্ডিং অনুশীলন, আরেকদিকে ট্রেনারের সঙ্গে দৌড়াচ্ছেন দু-একজন। অনুশীলনের দেখভাল ঠিকমত করতে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদের সঙ্গে রাখা হযেছে এইচপির দুই কোচ মিজানুর ও সোহেলকে। সব মিলিয়ে ট্রেনিংয়ে দক্ষযজ্ঞ চলছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। প্রথম দিনের অনুশীলনেই বোঝা গেল, কেন ট্রেনিংয়ের জন্য চট্টগ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মিরপুরে মূল মাঠ এখনও প্রস্তুত নয়। একাডেমি মাঠে জায়গা কম, ইনডোরের সঙ্গে দূরত্ব বেশ। বয়সভিত্তিক, এচিপিসহ অন্য দলগুলির অনুশীলনও থাকে। নিবিড়ভাবে লম্বা সময় ধরে টানা অনুশীলনের সুযোগ এই চট্টগ্রামেই। অনুশীলনের সময় ও ধরন, দুটিতেই নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে যেন সত্যিকার অর্থেই ‘নিবিড়’ থাকে। নেটসেশনগুলোর ধরন ছিল আলাদা। এক পাশের নেটে থ্রোয়ার দিয়ে ব্যাটসম্যানদের খেলাচ্ছিলেন হাথুরুসিংহে ও মিজানুর। আরেক পাশে বোলিং মেশিনের দায়িত্বে সোহেল। বোলিং মেশিনে চলছিল শুধু শর্ট বলের অনুশীলন। উইকেটে বসানো হয়েছে গ্রানাইটের স্লাব, সেখানে বল ফেলা হচ্ছিলো তুমুল গতিতে। লাফিয়ে বল ছুটে আসছিল ব্যাটসম্যানের বুক-ঘাড় বরাবর। পুল-হুকের পাশপাশি শর্ট বলের ডিফেন্স আর ছেড়ে দেওয়ার অনুশীলন। বলার অপেক্ষা রাখে না, অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারদের ভাবনা মাথায় রেখেই এই অনুশীলন। আগেও দেখা গেছে, এদেশের উইকেটেও শর্ট বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাবু করেন প্রতিপক্ষ ফাস্ট বোলাররা।
মাঝের দুই নেটে প্রথাগতভাবেই পেস-স্পিন মিলিয়ে বোলিং করছিলেন বোলাররা। সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসল ও বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ করছিলেন দেখভাল। ইনডোর সেশনের দায়িত্বে ছিলেন ব্যাটিং উপদেষ্টা মার্ক ও’নিল। ভিডিও করে রাখছিলেন সবার ব্যাটিং। ফুটেজ দেখে পরে করবেন কাঁটাছেড়া। ব্যাটসম্যানদের সবার প্রয়োজনীয়তা বুঝে আলাদা ব্যবস্থাও ছিল। শ্রীলঙ্কায় টেস্টে দু ইনিংসেই অফ স্পিনে বাজেভাবে আউট হওয়া মুমিনুল হককে যেমন অফ স্পিন খেলানো হয়েছে অনেক। এমনকি থ্রো ডাউন রেখে হাথুরুসিংহে স্বয়ং অফ স্পিন করেছেন মুমিনুলকে। একটা বলে দারুণ টার্ন ও বাউন্সে পরাস্ত করলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। ভড়কে গিয়ে কিনা, অফ স্পিনার সঞ্জিত সাহাকে খেলতেও মুমিনুলের একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। হাথুরুসিংহে তখন মুমিনুলকে নেটের বাইরে নিয়ে কথা বললেন মিনিট দশেক। দেখিয়ে দিচ্ছিলেন নানা কিছু। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল অফ স্পিন সমস্যার প্রেসক্রিপশন। অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার নাথান লায়নের ভাবনা মাথায় রেখেই ক্যাম্পে অনুশীলনের জন্য আনা হয়েছে তরুণ দুই অফ স্পিনার সঞ্জিত ও নাইম হাসানকে। মাঠের দুই পাশের নেট থেকে সেন্টারের দুই নেট হয়ে ইনডোর, পর্যায়ক্রমে সব নেটেই ব্যাটিং করতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। সকালের সেশনেই প্রত্যেকেই ব্যাটিং পেয়েছেন ৩৫-৪০ মিনিট। দুপুরে সেশনে ছিল আরেক দফা ব্যাটিং। বোলারদের জন্যও ছিল কঠিন অনুশীলন। প্রচ- রোদ ও গরমে প্রতি পেসারকেই বোলিং করতে হয়েছে ১২ ওভার। স্পিনাররাও বোলিং করে গেছেন টানা। সূচিতে প্রথম দিনের অনুশীলন ছিল সকাল ১০ টা থেকে ১টা। পরে সেটা বাড়িয়ে যোগ করা হয়েছে দুপুরের সেশনও। রবিবার ও সোমবার সকাল ১০ থেকে ৫টা পর্যন্ত অনুশীলন। একদিন বিশ্রামের পর বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রস্তুতি ম্যাচ। সব মিলিয়ে টেস্ট সিরিজের আগেই ক্রিকেটারদের হয়ে যাচ্ছে আরেক ‘টেস্ট’। ‘ছেলেরা তো ঘেমে-নেয়ে একাকার, ব্যাপক প্র্যাকটিস হচ্ছে”, ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে হাথুরসিংহেকে মজা করে এই কথা বলতেই বাংলাদেশ কোচ হেসে মনে করিয়ে দিলেন অনুশীলনের চিরন্তন আপ্তবাক্য, ‘ট্রেইন হার্ড, ফাইট ইজি!’