টানা ১১তম হারের লজ্জা ঘোচাতে পারবে পাকিস্তান?

88

সর্বশেষ জানুয়ারির ২৭ তারিখে কোনো এক জয়ের দেখা পেয়েছিল পাকিস্তান। জোহানেসবার্গে প্রোটিয়াদের ১৬৪ রানে বেধে রাখার পর তারা জিতেছিল ৮ উইকেটের ব্যবধানে। এরপর সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তারা হেরেছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে। সেই হারের বৃত্ত শুরু হলো, এখনও সেই বৃত্ত যেন পূরণই হচ্ছে না, কেবলই বাড়ছে। টানা ১০টি ওয়ানডে ম্যাচ হারলো পাকিস্তান। এমনকি বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছেও হেরেছিল তারা। এতটাই কঠিন হয়ে গেছে পাকিস্তানের ওয়ানডে পথ চলা। হারের বৃত্তই যেন তারা ভাঙতে পারছে না। বিশ্বকাপে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হওয়ার আগে এখন পাকিস্তানীদের একটাই চিন্তা, যে করেই হোক- এই বৃত্ত ভাঙতে হবে। টানা ১১তম হারের লজ্জা এড়াতে হবে। বিশ্বকাপে আসার আগে নিজেদের হোম ভেন্যু আরব আমিরাতে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুকি হয়েছিল ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। যেখানে অবশ্য পাকিস্তানের সেরা ৫-৬জন ক্রিকেটারই খেলেননি। বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু ওই ৫ ম্যাচে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ হয়ে দেশে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া। ওই ৫ ম্যাচের দিকে তাকালে দেখা যাবে, পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ঠিকই রান পেয়েছে। একটিমাত্র ম্যাচ ছিল লো স্কোরিং। প্রথম ম্যাচে ২৮০ করেও হেরেছিল তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে করেছে ২৮৪, তবুও জিততে পারেনি। তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার করা ২৬৬ রানের জবাবে পাকিস্তান অলআউট হয়েছিল ১৮৬ রানে। চতুর্থ ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ২৭৭ রান। জবাব দিতে নেমে পাকিস্তান থেমেছে ২৭১ রানে। শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৩২৭ রান। জবাবে পাকিস্তান গিয়েছিল ৩০৭ রান পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ, ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজ ঠিকমত করতে পারলেও বোলাররা ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। তাদের ব্যর্থতার কারণেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছিল পাকিস্তানীদের। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইংল্যান্ডের মাঠে গিয়ে স্বাগতিকদের বিপক্ষেও পাকিস্তান খেলেছিল ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। যার প্রথমটি ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। পরের চার ম্যাচের প্রতিটিতেই পাতিস্তানের রান ৩০০ প্লাস কিংবা কাছাকাছি। অর্থ্যাৎ, ওই চার ম্যাচের একটিতে সর্বনিম্ন তারা করেছিল ২৯৭ রান। তবুও, ইংল্যান্ডের কাছে চার ম্যাচের প্রতিটিতেই হারতে হয়েছিল তাদের। প্রথম ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানি বোলারদের পিটিয়ে ইংল্যান্ড করেছিল ৩৭৩ রান। জবাবে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরাও কম যাননি। তারা হেরেছে মাত্র ১২ রানে। অর্থ্যাৎ ফাখর জামান আর বাবর আজমরা করেছিলেন সেদিন ৩৬১ রান। তবুও হার! পরের ম্যাচে পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ৩৫৮ রান। বোলারদের ব্যর্থতায় এই ম্যাচেও হার। ইংল্যান্ড ৪৪.৫ ওভারেই ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। চতুর্থ ম্যাচেও প্রথমে ব্যাট করেছিল পাকিস্তান। করেছিল ৩৪০ রান। এমন ম্যাচেও হারতে হলো তাদের। ইংলিশরা ৩ বল এবং ৩ উইকেট হাতে রেখেই পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৩৫১ রান করেছিল ইংল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে এই ম্যাচে শুধুমাত্র ৩০০ স্পর্শ করতে পারেনি পাকিস্তানিরা। করেছে ২৯৭ রান। অর্থ্যাৎ, বোঝাই যাচ্ছে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা রয়েছেন তুমুল ফর্মে। কিন্তু বোলাররা ঠিকমত ক্লিক করতে পারছে না দেখেই এত রান করার পরও হারতে হচ্ছে তাদের। পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচটি যে মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, সেই ট্রেন্টব্রিজ আবার রান প্রসবীনি। যেখানে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮১ রান হয়েছিল। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৪৪ রানও উঠেছিল এই মাঠে। যদিও ওই রান করেছিল ইংল্যান্ড। তবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা ক্লিক করলে, এই মাঠে ৫০০ রানও তোলা সম্ভব। তেমন সম্ভাবনার কথাই জানাচ্ছেন অনেকে। যদিও বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ট্র্যাক রেকর্ড কখনোই ভালো নয়। তারওপর, টানা ১০ ম্যাচ হারারের কারণে ১১তম হারের লজ্জা এড়ানোর মিশন নিয়ে আজ মাঠে নামছে পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর পাকিস্তান বোলিং শক্তি বাড়ানোর জন্য দলে নিয়েছে মোহাম্মদ আমির আর ওয়াহাব রিয়াজকে। তারা আজ কি পরিবর্তন ঘটাতে পারেন দলটির বোলিংয়ে, সেটা দেখার বিষয়। অন্যদিকে ক্রিস গেইল, সাই হোপ, হেটমায়ার, আন্দ্রে রাসেলরা রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তাদেরকে আটকানো যে কোনো বোলারের জন্যই কঠিন একটি কাজ। আবার বোলার ওশানে থমাস, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচ কিংবা অ্যাশলে নার্সরাও কম ফর্মে নেই। তারাও আটকে দিতে পারেন যে কোনো ব্যাটিং লাইনআপকে। দেখার বিষয়, ট্রেন্টব্রিজে আজ পাকিস্তানের ব্যাটিং না ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কিংবা পাকিস্তানের বোলিং না ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং- কোনটা ক্লিক করে। ভাগ্যটাও অনেক কিছু নির্ধারণ করে দেবে হয়তো। কাদের ভাগ্য আজ পক্ষে কথা বলবে- সেটাই দেখার বিষয়।