জয়জয়কার অ্যানিমেশনের

২০২৫ সালে হলিউডের বক্স অফিস চিত্রের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে–এ বছর অ্যানিমেশনই রাজত্ব করেছে। বাস্তব অভিনেতাদের উপস্থিতিকে ছাপিয়ে অ্যানিমেটেড চরিত্ররাই দর্শকদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে। বছরের সর্বাধিক আয় করা সিনেমাগুলোর তালিকা বিশ্লেষণ করলে অ্যানিমেশনের এই দাপট অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মাত্র ৮০ মিলিয়ন ডলার বাজেটে নির্মিত চীনা অ্যানিমেটেড ফ্যান্টাসি সিনেমা ‘নে ঝা-২’ বিশ্বজুড়ে আয় করেছে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা একে বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সিনেমার মর্যাদা এনে দিয়েছে।

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডিজনির বহুল প্রতীক্ষিত অ্যানিমেশন ‘জুটোপিয়া ২’, যার আয় ছাড়িয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় অবস্থানেও রয়েছে ডিজনিরই লাইভ-অ্যাকশন অ্যানিমেশন ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’। একই সঙ্গে জাপানি অ্যানিমেশন ‘ডেমন স্লেয়ার: কিমেৎসু নো ইয়াইবা–দ্য মুভি: ইনফিনিটি ক্যাসল’ মুক্তির পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এবং দর্শকমহলে দারুণ উত্তেজনা ছড়ায়। অ্যানিমেশনের এই জোয়ারের মধ্যেও কিছুটা মুখ রক্ষা করেছে বড় স্টুডিওগুলোর কয়েকটি প্রকল্প।

ওয়ার্নার ব্রসের ‘আ মাইনক্রাফট মুভি’ বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ৯৫৮ মিলিয়ন ডলার এবং ইউনিভার্সাল পিকচারসের ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ পৌঁছেছে ৮৬৯ মিলিয়ন ডলারে। দুটি ছবিই অল্পের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারেনি। বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্র্যাড পিট অভিনীত ‘এফ ওয়ান’ এবং ডেভিড কোরেন্সওয়েটের ‘সুপারম্যান’ কিছুটা আলোচনায় এলেও সামগ্রিকভাবে হলিউডে বড় তারকানির্ভর সিনেমাগুলো প্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বছর আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, হলিউডে তারকাদের স্টারডাম ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

ডোয়াইন জনসনের ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ বক্স অফিসে বড় ধরনের ব্যর্থতার মুখে পড়েছে। জেনিফার লরেন্সের ‘ডাই মাই লাভ’ আয় করতে পেরেছে মাত্র সাড়ে ১১ মিলিয়ন ডলার। একইভাবে আশানুরূপ সাড়া পায়নি জুলিয়া রবার্টসের ‘আফটার দ্য হান্ট’ এবং গ্লেন পাওয়েলের ‘দ্য রানিংম্যান’। এমনকি টম ক্রুজের বহুল আলোচিত ‘মিশন: ইম্পসিবল– দ্য ফাইনাল রেকনিং’ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০০ মিলিয়ন ডলারের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি, যা এই জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য হতাশাজনক বলেই ধরা হচ্ছে।

ব্র্যাড পিটের ‘এফ ওয়ান’-এর বক্স অফিস ফলাফলও তাঁর তারকাখ্যাতির তুলনায় অনেকটাই কম। তবে যে কোনো সময়ের তুলনায় ২০২৫ সালে হলিউডে ভৌতিক সিনেমা উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। ৯০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের ‘সিনারস’ বিশ্বব্যাপী আয় করেছে সাড়ে ৩৫০ মিলিয়নের বেশি। অন্যদিকে মাত্র ৩৮ মিলিয়নে নির্মিত ‘ওয়েপনস’ পেরিয়ে গেছে আড়াইশ মিলিয়ন ডলারের মাইলফলক। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগামী বছরগুলোতে হলিউডে হরর ঘরানার সিনেমার সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এ বছরের আরেকটি বড় আলোচিত ঘটনা হলো– ডিসির কাছে মার্ভেলের পরাজয়। দীর্ঘদিন ধরে মার্ভেলের সুপারহিরো সিনেমাগুলো দর্শকদের মন জয় করে এলেও এবার চিত্রটা বদলেছে। মার্ভেল এ বছর ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’, ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর: ফার্স্ট স্টেপ’ এবং ‘থান্ডারবোল্টস’-এর মতো বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তি দিলেও ডিসির ‘সুপারম্যান’-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সুপারহিরো সিনেমার খেতাব গেছে ‘সুপারম্যান’-এর ঝুলিতে। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স যাত্রা শুরুর পর এই প্রথমবার ডিসির কাছে স্পষ্টভাবে পিছিয়ে পড়ল প্রতিষ্ঠানটি।