জেনে নিন পিয়াজের উপকার ও অপকারিতা

386

দাম বাড়ায় পিয়াজ নিয়ে চলছে যত বাড়াবাড়ি। কেউ বলছেন পিয়াজ খাবো, আবার কেউ বলছেন পিয়াজ ছাড়াই হবে রান্না। পিয়াজ রান্নার কোন অপরিহার্য উপাদান নয়। অথবা পিয়াজ এমন কোন খাবার নয় যে না খেলে পুষ্টি ব্যহত হবে। সাধারণত রান্নাকে সুস্বাদু করার জন্যই বছরের পর বছর ধরে রান্নায় পিয়াজ ব্যবহার হয়ে আসছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম পিয়াজে থাকছে-
ক্যালরি- ৪০ কিলো ক্যালরি
ফ্যাট- ০.১ গ্রাম
প্রোটিন- ১.১ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট- ৯ গ্রাম (সরল শরকরা ৪.২ গ্রাম)
ভিটামিন বি ৬- অতি সামান্য

এই তালিকা থেকেই বোঝা যায় যে পিয়াজ আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার মতো কোনও খাবার নয়। পিয়াজের রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করলে এতে পাবো ফেনলিক কম্পাউন্ড (এন্টিওক্সিডেন্ট), পানি আর ফাইবার। কাঁচা খেলে যদিও কিছু এন্টিওক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, রান্নার ফলে তাও নষ্ট হয়।

পিয়াজের কিছু ক্ষতিকর দিক আছে যেগুলো জেনে রাখা ভাল-

১। অ্যালার্জি: 
১৯৯০ সালে Journal of Allergy and Clinical Immunologyতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে পিয়াজে বিদ্যমান  All c4 aprofilin এবং All c alliin lyase Anaphylaxis এর জন্য দায়ী।

২। আন্ট্রিক গ্যাস: 
পিয়াজে উপস্থিত ফেনলিক কম্পাউন্ড ও সরল চিনি যা অনেকের ক্ষেত্রেই এসিডিটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৩। গর্ভকালীন জটিলতা:
American Journal of Gastroenterology তে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দেখা গেছে যে গর্ভবতী নারীরা পিয়াজ খেলে তাদের বুক জ্বালা-পোড়া, বমি ও বমিভাব বাড়ে।

৪। ঔষধের কাজে বাঁধা সৃষ্টি: 
পিয়াজ  blood thinner drug এর কাজে বাঁধা প্রদান করে। যারা রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্ত তরলকারক ঔষধ খাচ্ছেন তাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

এতগুলো নেতিবাচক দিক তুলে ধরার কারণ একটাই, জনসাধারণকে বোঝানো যে দাম বাড়ুক বা না বাড়ুক পেঁয়াজ খাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা  সাবধান হওয়া উচিত।

লেখক: চীফ নিউট্রিশনিস্ট, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম।

প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে পিয়াজের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এটিকে মিরাকল ফুড বা বিস্ময়কর খাবারও বলা হয়ে থাকে। কেননা, ডায়াবেটিস, হাঁপানি ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে পিয়াজ অত্যন্ত সহায়ক একটি পণ্য। পিয়াজের এসব উপকারিতা সত্ত্বেও এ খাবার বেশি পরিমাণে খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। নিম্নে পিয়াজ বেশি খাওয়ার কিছু কুফল আলোচনা করা হল:-

অ্যালার্জি: পিয়াজের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে আপনার ত্বকে এ খাবারের ফলে চুলকানিযুক্ত লাল র‍্যাশ ওঠতে পারে এবং সেইসঙ্গে চোখে লালতা ও চুলকানি হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে পিয়াজ সংশ্লিষ্ট মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা পাওয়া যায়নি, কিন্তু পিয়াজ খাওয়ার পর আপনার ত্বক লাল হলে, মুখে ফোলা বা অস্বস্তিকর অনুভূতি হলে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে অথবা রক্তচাপ কমে গেলে এটি অ্যানাফাইল্যাক্টিক রিয়্যাকশনের লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে জরুরি মেডিক্যাল চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

আন্ত্রিক গ্যাস: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অনুসারে, মানুষের পাকস্থলি বেশিরভাগ সুগার হজম করতে পারে না, যা অবশ্যই অন্ত্রে চলে আসে- অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া একটি প্রক্রিয়ায় এসব সুগারকে ভাঙে, যার ফলে গ্যাস উৎপন্ন হয়। পিয়াজে প্রকৃতিগতভাবে ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা কিছু লোকের ক্ষেত্রে আন্ত্রিক গ্যাসের উৎস হতে পারে। পিয়াজ সংশ্লিষ্ট গ্যাসের লক্ষণ হিসেবে পেট ফেঁপে যেতে পারে, পেটে অস্বস্তি হতে পারে, ঘনঘন বাতকর্ম হতে পারে ও মুখ থেকে দুর্গন্ধময় শ্বাস বের হতে পারে।  আপনার পিয়াজের প্রতি ফুড ইনটলারেন্স থাকলে এসব উপসর্গ আরও খারাপ হতে পারে। ফুড ইনটলারেন্স হচ্ছে পরিপাকতন্ত্র কর্তৃক কিছু নির্দিষ্ট খাবার হজমের অক্ষমতা। ফুড ইনটলারেন্স জীবননাশক না হলেও এটি বমি বমি ভাব, বমি ও ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।

বুকজ্বালা: বুকজ্বালা হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে পাকস্থলির অ্যাসিড খাদ্যনালিতে ওঠে আসে ও বুকে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি সৃষ্টি করে। আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, বুকজ্বালা নেই এমন লোকেরা পিয়াজ খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বুকজ্বালা বা গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্স ডিজিজের লোকেরা পিয়াজ খেলে উপসর্গের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া, পিয়াজ খাওয়ার পর গর্ভবতী নারীদের বুকে জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে। তাই যারা পিয়াজ খাওয়ার পর বুকে অস্বস্তি অনুভব করেন তাদের পিয়াজের ব্যবহার সীমিত করা উচিত।

ড্রাগ ইন্টার‍্যাকশন: আপনাকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে পিয়াজ বেশিরভাগ ওষুধের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে না। কিন্তু পিয়াজ পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে রয়েছে বলে কিছু ওষুধ সেবনকালে এর ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আপনি প্রচুর পরিমাণে পিয়াজ পাতা খেলে এর ভিটামিন কে কিছু রক্ত পাতলাকারী ওষুধের কার্যকারিতা কমাতে পারে, যেমন- কৌমাডিন। যারা রক্ত পাতলাকারী ওষুধ সেবন করেন তাদের খাবার সংক্রান্ত যেকোনও পরিবর্তনের পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

সূত্র: লাইভসায়েন্স