জুলাইয়ে ৭৩৫২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি

565

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৭ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গতবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৯ শতাংশ বেশি।
তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের চেয়ে এই অঙ্ক ২ শতাংশ কম।
নতুন অর্থবছরের শুরু থেকেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধিকবার এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। তবে এখনও তা কমানো হয়নি।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের আয় থেকে আগের সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। ফলে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।
এর বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সে হিসাবে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।
জুলাইয়ের নিট বিক্রির মধ্যে ১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র; ১ হাজার ৩২০ কোটি টাকার তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র; ৬৪৮ কোটি টাকার পেনশনার সঞ্চয়পত্র ; ৪৮০ কোটি টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।
ব্যাংক আমানতের সুদ হার কম থাকায় এবং পুঁজিবাজারে পুরোপুরি আস্থা ফিরে না আসায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
বর্তমানে ব্যাংকে মেয়াদি আমানতে ৩ থেকে ৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। অথচ পাঁচ বছর আগেও ১২ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যেত।
অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার ২০১৫ সালের মে মাসে কিছুটা কমানোর পরও ১১ শতাংশের উপরই রয়েছে। এ কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দিন দিন বাড়ছেই।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।
একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে; ওই মাসে ৭ হাজার ৪৯৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিক্রি ছিল গত জানুয়ারি মাসে, ৭ হাজার ৩৫৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ জুলাই মাসের ৭ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার বিক্রির এ যাবৎকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল। কিন্তু বিক্রির চাপে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে সরকার এখন ব্যাংক থেকে যে অর্থ ঋণ নিচ্ছে, তার চেয়ে পরিশোধ করছে বেশি। গত জুলাই ও অগাস্ট দুই মাসেই ব্যাংকগুলোর দেনা বাবদ সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।