জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে আহত অন্তত ৩০

জাপানে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ঘরের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।  মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। জাপানের আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুসারে, সোমবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ১১টার দিকে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে দেশটির উত্তরাঞ্চল। আওমোরি অঞ্চলের উপকূল থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর ফলে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়, যা এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভূমিকম্পের পরপরই আওমোরি ও হোক্কাইডোর কিছু অংশে ৭০ সেমি (২৭ ইঞ্চি) উঁচু ঢেউ দেখা যায়। এসময়, সরিয়ে নেওয়া হয় উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের। ভূমিকম্পের প্রভাবে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আড়াই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। ইস্ট জাপান রেলওয়ে কয়েকটি রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।  স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, আগামী দিনে আরো শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে। জনসাধারণকে কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের উদ্দেশে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি বলেন, “আপনারা সবাই সামনের কয়েক দিন সতর্ক থাকবেন। কম্পন অনুভূত হওয়ামাত্র যেখানেই থাকুন- তাৎক্ষণিকভাবে যেন বাইরে বেরিয়ে পড়তে পারেন- সে বিষয়ক প্রস্তুতি রাখবেন। ভূমিকম্পের নিজেদের মূল্যবান সম্পত্তি-আসবাবপত্র যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়- সে বিষয়েও সতর্ক থাকবেন।” বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ভূমিকম্প ও সুনামি সতর্কতা জারি হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে আওমোরি এবং আশপাশের উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রায় ৭০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন জাপানের দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের উদ্ধারকারী বাহিনী। জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মিনোরু কিহারা বলেন, “আমরা ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন এবং উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমসহ জরুরি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।”  জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল ২০১১ সালে। হোনশু অঞ্চলে ৯.০ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের আঘাতে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় এবং পুরো অঞ্চলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।  জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। এটি রিং অব ফায়ারে অবস্থিত, যার ফলস্বরূপ, বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই বছরের শুরুতে, জাপানের ভূমিকম্প তদন্ত প্যানেল বলেছিল, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে নানকাই খাদে একটি মেগাভূমিকম্প হওয়ার ৬০-৯০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি অনুসারে, এটি ট্রিলিয়ন কোটি আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং সম্ভাব্যভাবে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল বরাবর বিস্তৃত ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল নানকাই খাদে ভূমিকম্পে ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।