আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে, মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে।” সৃষ্টি সুখের উল্লাসে বাঁধনহারা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যার কবিতা, গান, উপন্যাস, গল্পে আমরা জীবনের জয়গান করি। আমরা তাকে পাই দ্রোহে, মানবতায়, প্রেমে, সাম্যে। কোথায় নেই তিনি? বাঙালির সব আবেগ, অনুভূতিতে আছেন কবি। বিদ্রোহ, সাম্য এবং জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এরশাদ হোসেন খান। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু হায়াৎ মো. রহমতুল্লাহ। আলোচনা সভায় স্বাধীন সাহিত্য সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক এনামুল হক তুফান জাতীয় কবি’র জীবনের বিভিন্ন অংশ তুলে ধরে বলেন, তাঁর বিচরণ ছিল সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে। তিনি অসংখ্য ইসলামিক গান ও কবিতা লিখেছেন। তাই তিনি ছিলেন একজন আদর্শ ইসলামিক কবি। আবার তিনি হিন্দু ধর্মেরও অনেক শ্যামা সংগীত রচনা করেছেন। অন্যদিকে তিনি একজন মানবতার, ভালবাসার, প্রেমের কবি। সর্বপরি তিনি বিদ্রোহী কবি। ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা বাঙালি জাতিকে অনেক উজ্জিবীত ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সেসব কবিতা ও গান আজও আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতীয় কবির অবদান ছিল অনেক বেশি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কবি নজরুলের গান ও কবিতা আমরা রেডিওতে নিয়মিত শুনতাম। কবি’র সেইসব সৃষ্টিগুলো আমাদের রক্ত গরম করত। আর তাতেই আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেতাম। শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের প্রভাষক নওশাবা নওরীন নেহা বলেন, শ্রষ্ঠার ভবিষৎ দেখার অসাধারণ বৈশিষ্ঠ্য ছিল জাতীয় কবি’র মধ্যে। কবি সংকল্প কবিতায় বলেছিলেন, “ বিশ্বজগৎ দেখব আমি, আপন হাতের মুঠোয় পুরে।” সেমসয় সেটা সবার কাছে অকল্পনীয় থাকলেও বর্তমানে সেটি সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশের স্যাটেলাইট আকাশে অবস্থান করছে। আমরা এখন পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় অর্থাৎ মুঠোফোনের দ্বারা দেখতে পাচ্ছি। সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু হায়াৎ মো. রহমতুল্লাহ জাতীয় কবি সর্ম্পকে বলেন, শিক্ষাজীবনে ছাত্র হিসেবে তাঁর ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তিনি মক্তব্যে পড়াশোনা করার সময় ছাত্র ও শিক্ষকতা একসাথে করেছেন। প্রথম জীবনটাই শুরু হয়েছে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে, এরপর যোগ দিয়েছেন লোটোর দলে। অতঃপর আবার লেখাপড়ায় গিয়েছেন, সৈনিক হিসেবে যোগদান করেছেন, জেল খেটেছেন। কিছুদিন রাজনীতি করেছেন, নির্বাচনে হেরেছেন। আবার সাংবাদিকতাও করেছেন। সবশেষে নিজের সবকিছু উজার করে দিয়েছেন দেশের মানুষের জন্য। তিনি ছিলেন খুবই খেয়ালী কবি। খুব সম্ভবত একমাত্র কবি যিনি তাঁর অনেক কবিতা দু আনা, চার আনা, আট আনা, দশ আনা ও সর্বোচ্চ দুই টাকায় বিক্রি করেছেন। ওই সময়ের অনেক কবির কবিতার গভীরে গেলে পাওয়া যাবে যেগুলো আসলে সেই কবির কবিতা নয়। কবি নজরুল দারিদ্রের তাড়না অথবা সৃষ্টি শেখার উল্লাসেই সামান্য কিছু পয়সার বিনিময়ে অনেক কবিতা লিখে দিতেন। তিনি আমাদের মধ্যে বিদ্রোহের চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা পরাধীন ছিলাম। সেখান থেকে স্বাধীনতার স্বাধ আচ্ছাদন করতে বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কবি আমাদেরকে জাগিয়েছেন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য। তিনি এতটাই খেয়ালী ছিলেন যে, একটি রাতের মধ্যেই তিনি লিখে ফেলেছেন “বিদ্রোহী” কবিতাটি। তিনি ছিলেন সাম্যের কবি। আমরা সবাই সমান অধিকারের কথা বলি। তিনি এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি সাম্যের কথা বললেন। অর্থাৎ যার যতটুকু পাওয়ার কথা ততটুকুর কথায় বললেন। অল্প বয়সেই তিনি অসুস্থ না হলে আমরা তাকে পেতাম পাকিস্তানি বিরোধী আন্দোলনেও । এমনকি স্বাধীনতা পরবর্তী দিকনির্দেশনাতেও আমরা তাকে পেতাম। তা সত্বেও তাঁর লেখায় আছে এদেশের জনসাধারণের, দরিদ্র, বঞ্চিত, খেটে-খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের কথা। তাদেরকে মূল স্বোতদ্ধারায় ফিরিয়ে আনার কথা। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ামর্যান সোহরাব আলী, জেলা কালচারাল অফিসার ফারুকুর রহমান ফয়সাল, নামোশংকরবাটি কলেজের উপাধাক্ষ্য মতিউর রহমান, আমনুরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুদরত-ই-খুদা।