জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে সচেতনতা জরুরি

481

<শাহরিয়ার হোসেন শিমুল>

বর্তমানে জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অব্যাহত আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন জনসংখ্যার হার কমানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করছেন তাঁরা।
সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি জন্ম নিয়ন্ত্রণে জেলার একমাত্র কমিউনিটি রেডিও, রেডিও মহানন্দা বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে আসছে। গণমাধ্যমটি নিয়মিত পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে টক শো, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ও সচেতনতা বিষয়ে প্রমো বাজিয়ে থাকে। গণমাধ্যম হিসেবে জেলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ও রেডিওতে পরিবার পরিকল্পনার সুফল সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে চলেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিকল্পি পরিবার গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া সঠিক সময় সন্তান নেবার পরিকল্পনা করতে হবে এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণে পদ্ধতির যথাযত প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্যাটেলাইট ক্লিনিকে এ সেবা প্রদান করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, প্রত্যেকটা পরিবারের সদস্যের উচিত সঠিকভাবে কোন না কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা। কারণ, জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জনসংখ্যার হার কমা সম্ভব নয়। তিনি বলেন-জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে স্থায়ী পদ্ধতি আর অস্থায়ী পদ্ধতি। নারীদের ক্ষেত্রে স্থায়ী পদ্ধতি হচ্ছে টিউবেকটমি (লাইগেশন)। এ পদ্ধতি হচ্ছে একটি সহজ অপারেশন। যে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ পদ্ধতির সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। যে সকল সক্ষম দম্পতির দুটি জীবিত সন্তান আছে এবং ছোটটির বয়স কমপক্ষে এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে সেটা তাদের জন্য প্রযোজ্য। টিউবেকটমি অপারেশন করতে সময় লাগে মাত্র ১৫-২০ মিনিট। এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
নারীদের জন্য অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির নাম ইমপ্ল্যান্ট। এ পদ্ধতিটি বর্তমানে বেশি নিচ্ছে নব দম্পতিরা। এ পদ্ধতি হচ্ছে একটি বা দুটি নরম চিকন ক্যাপসুল যা দেয়াশলাই এর কাঠির চেয়ে ছোট। নারীদের হাতের কনুইয়ের উপরে ভিতরের দিকে চামড়ার নিচে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। মাসিকের প্রথম ৫-৭দিনের মধ্যে ইমপ্ল্যান্ট নিতে হবে। এ পদ্ধতি ৩/৫ বছরের জন্য কার্যকর। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও এ পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, নারীদের জন্য আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি হচ্ছে আইইউডি। এটি নারীদের জয়ারুতে স্থাপন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে কপার টি ৩৮০ এ ব্যবহার করা হয়। এর সুবিধা হচ্ছে এটি দশ বছর কার্যকর। স্বাভাবিক প্রসবের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অথবা সিজারিয়ান অপারেশনের সময় আইইউডি গ্রহণ করা যায়। এটি প্রয়োগ করা সহজ, মাত্র কয়েক মিনিটে প্রয়োগ করা যায়। নারীদের সহজ আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে খাবার বড়ি। আমাদের দেশের বেশির ভাগ নারীরা এ পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকেন। এটি একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। আরো একটি পদ্ধতি চালু রয়েছে নারীদের জন্য সেটা হচ্ছে ইনজেকশন। এটিও অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি। বাংলাদেশে ডিপোপ্রভেরা ইনজেকশন ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিপোপ্রভেরা প্রতি তিন মাস পরপর নিতে হয়।
পুরুষের জন্য অস্থায়ী জন্মনিরোধক পদ্ধতি হচ্ছে কনডম। কনডম ব্যবহারে জন্মনিনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যৌনবাহিত রোগ ও এইচআইবি/ এইডস প্রতিরোধে সহায়তা করে। পরিবার পরিকল্পনার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুস সালাম আরো বলেন, এসব পদ্ধতির যে কোন একটি গ্রহণ করলেই জন্মনিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জন্মনিরোধ পদ্ধতি গ্রহণ করা গৃহিনী তাসনিমা তাবাসুম বলেন, “আমার প্রথম বাচ্চা নেবার পর আমি ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি গ্রহণ করি। আমার এ পদ্ধতি ব্যবহারে আমাদের কোন রকম সমস্যা হয় না। সকলে সচেতন হলে এ পদ্ধতি নারীদের গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।” আরেক গৃহিনী মাকসুদা পারভিন জানান, বিয়ের পর আমি টিউবেকটমি (লাইগেশন) পদ্ধতি গ্রহণ করি। এ পদ্ধতি গ্রহণের পর কিছুদিন একটু সমস্যা হতে পারে। তবে সেটা সাময়ীক। জন্মনিরোধের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির কার্যকারিতা অনেক। বিবাহিত যে কোন নারী এ পদ্ধতি স্বানন্দে গ্রহণ করতে পারেন।” নাম প্রকামে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, বাংলাদেশে পুরুষদের বেশি পছন্দ কনডম। কারণ, কনডম ব্যবহার খুব সহজ। জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যে কোন যৌনবাহিত রোগ থেকেও রক্ষা করে এপদ্ধতি।  নারী পুরুষের যে কোন স্থ্যায়ী ও অস্থায়ী পদ্ধতি নিতে স্থানীয় ক্লিনিক ও সদর হাসপাতালে সেবা পাওয়া যায়। সহজ লোভ্যতার কারণে যে কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও এ সেবা দেয়া হয়ে থাকে। কাজেই নিজের সুস্থতার জন্য, যৌন বাহিত রোগ, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। জন্মনিয়ন্ত্রণে আরো প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী