জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর

486

জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা দেশে হামলার প্রস্তুতি নিলেও গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় বেশ কয়েকটি বড় বিপদ এড়ানো গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বিরোধী ও উন্নয়ন সংক্রান্ত’ মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা মিলে সম্মিলিতভাবে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে; যার ফলে আমরা ইতোমধ্যে অনেকগুলি সন্ত্রাসী-জঙ্গিৃ তারা নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা সেই তথ্যগুলি দিতে পেরেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাও সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পেরেছে বলে আমরা অনেক বড় বড় বিপদ থেকে দেশের মানুষের জানমাল বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ তাদের সহযোগিতাকারী সাধারণ জনগণকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের শুরু থেকে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকা- ঘটানোর পর গত বছর জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এরপর দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়; নিহত হন বেশ কয়েকজন জঙ্গি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেটা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ পারে নাই, বাংলাদেশ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে থেমে থাকলে হবে না। আমাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। ইসলামে ‘খুন-খারাবি বা জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই’- এ বিষয়টি সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, ওলামা-মাশায়েখদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। এছাড়া জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদবিরোধী সচেতনা সৃষ্টিতে অভিভাবক ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ইসলামকে ‘শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরীহ মানুষ হত্যা করা সবথেকে বেশি গুনার কাজ। যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করে তারা জান্নাতে যায় না, তারা জাহান্নামে যায়। ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এই দেশের স্বাধীনতা এনেছি। এখানে সকল ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে এদেশের স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমরা এখানে এটাই চাই যে, এদেশে সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম পালন করবেন শান্তিপূর্ণভাবে। সকল ধর্মের মানুষ বসবাস করবেন একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশে। এটাই তো আমাদের ইসলামের শিক্ষা, এটাইতো আমাদের ইসলামের নির্দেশ। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নের কাজগুলো করতে হলেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন। যখনই এ ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখনই বাংলাদেশের বদনাম হয়। এই বদনামটা যেন না হয়, তার জন্য সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের চিত্রও প্রধানমন্ত্রী এ সময় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী’ দেশ গড়ার লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করছে। আওয়ামী লীগের নীতি হচ্ছে আত্মমর্যাদাশীল জাঁতি গঠন করা। মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করে উন্নত দেশ গঠন করা। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন। ঢাকা বিভাগে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এবং যেগুলো চলমান আছে তার ওপর একটি উপস্থাপনা দেখানো হয় সভার শুরুতেই। এরপর কয়েকটি জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। মত বিনিময়ের আগে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সাতটি জেলায় ১১টি গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন করা হবে। তার আগেই সকল মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে তার সরকার। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বর্তমানে দেশে দুই লাখ ৮০ হাজারের মত মানুষ গৃহহীন রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার তাদের ঠিকানা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। বাসস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সময়ে ১৯৭২ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর নোয়াখালীর ২০০ গৃহহীন পরিবারকে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন করা হয়; নাম দেওয়া হয় পোড়াগাছা গুচ্ছগ্রাম। বর্তমান সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির আওতায় ২৫৪টি গুচ্ছগ্রামে ১০ হাজার ৭০৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বর্তমানে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে আরও ১০ হাজার ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ ও অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমেও গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে কাজ করছে সরকার।