চীনের প্রতি নরম ট্রাম্প, ভারতের ক্ষেত্রে গরম অবস্থানে

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রনীতির ধারা থেকে সরে এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়ার প্রতি আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গিতে এক নাটকীয় পরিবর্তন এনেছেন। এই কৌশলগত পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে একটি অদ্ভুত বৈপরীত্য। একদিকে ভারত, যাকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক অংশীদার এবং ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তি হিসেবে দেখা হয়, তার ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আমেরিকার প্রধান কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী চীন অপ্রত্যাশিতভাবে উষ্ণ সম্পর্ক উপভোগ করছে। ভারতের বেশ কিছু রপ্তানি পণ্যের ওপর নতুন করে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। এই বিশাল শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে কারণ হলো ভারতের রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখা। এর আগে ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন, যা চলতি মাসে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দ্বিগুণ করা হয়েছে। এই শুল্ক শুধু অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলছে না বরং এর একটি রাজনৈতিক বার্তাও রয়েছে। এসব কঠোর পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে গেছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ পিটার নাভারোর মতো ব্যক্তিরা তীব্র সমালোচনামূলক মন্তব্য করছেন। মূলত সম্পর্কের সুর অংশীদারিত্ব থেকে শাস্তির দিকে মোড় নিয়েছে, যা উভয় দেশের নীতিনির্ধারক ও পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের হতবাক করেছে। এটি কেবল একটি বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয় বরং একটি বড় কূটনৈতিক বিঘ্ন। এর সম্পূর্ণ বিপরীতে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন। চীন রাশিয়ান তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হওয়া সত্ত্বেও তাদের ওপর কোনো অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়নি। বরং ১২ আগস্ট ট্রাম্প চীনা আমদানির ওপর শুল্ক আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন, যা মাত্র ৩০ শতাংশ এ রাখা হয়েছে—যা ভারতের ওপর আরোপিত নতুন শুল্ক হারের চেয়ে অনেক কম।এটাই সব নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়াংয়ের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে তিনি ছয় লাখ চীনা শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নের অনুমতি দেবেন, যা বর্তমান সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। এটি ট্রাম্পের আগের নীতির তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, যেখানে তিনি কঠোর ভিসা নীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার নামে চীনা নাগরিকদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছিলেন। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চীনের সঙ্গে খুব ভালোভাবে চলছি। শিক্ষার্থীরা এখানে এখানে আসতে পারবে না—এমন কথা বলা খুবই অপমানজনক। যদি তারা না আসে, তাহলে কী হবে জানেন? আমাদের কলেজ ব্যবস্থা খুব দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাবে। এদিকে ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকরে অ্যাপারেল (পোশাক), বস্ত্র, সোনা, চিংড়ি, কার্পেট এবং আসবাবপত্রের মতো পণ্যের রপ্তানি মার্কিন বাজারে তুলনামূলকভাবে অলাভজনক হয়ে পড়বে। এতে ভারতে বহু কম দক্ষ কর্মীর চাকরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া এমনকি চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো এখন ভারতের সম্ভাব্য ক্ষতির সুযোগ নিতে পারে। কারণ এসব দেশের ওপর আরোপ করা শুল্কের হার ভারতের তুলনায় কম হবে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কার্যকর হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানির মূল্য আগের অর্থবছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারতের পণ্য রপ্তানি গত অর্থবছরের প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০২৬ অর্থবছরে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে।