Site icon রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

চার হাত ও দুই পায়ে ভর করেই চলছে দুই ভাইয়ের জীবন

শিবনাথ ও শিবরাম। তারা দুই ভাই। ভারতের রায়পুরের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করে এই শিশু। জন্মের পরই সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে তারা। ভাবছেন কীভাবে কারণ তারা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। আর এই যুক্ত অবস্থাতেই তারা পার করে দিয়েছে ১৮ বছর। অনেক চিকিৎসকেরাই তাদের আলাদা করার প্রস্তাব রেখেছেন। তবে দুই ভাই তাতে নারাজ। সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ তারা। আর তাইতো যুক্ত অবস্থায থাকতে তাদের কোনো আফসোস নেই। আর এখন তো তাদের বয়সও বেড়েছে। চাইলেও আর এখন অপারেশন করা সম্ভব না। শিবনাথ বলেন ‘আমরা চাইলেও এখন আলাদা হতে পারব না। আমরা অবশ্য আলাদা হতে চাই না। ঈশ্বরের কাছ থেকে এক অনন্য উপহার। আমাদের দুটি দেহ হলেও একটিই প্রাণ।

তাদের একই পেট। তবে ফুসফুস, হার্ট এবং ব্রেইন আলাদা। তারা গোসল, খাওয়া, পোশাক পরা এবং একে অপরের চুল আঁচড়ানোসহ বেশিরভাগ কাজই নিজেরাই করেন। শিবরাম বলেন, আমরা একসঙ্গে যুক্ত থাকলেও আমাদের মন মানসিকতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন-আমাদের পছন্দের খাবারগুলোও ভিন্ন। আমরা একজন পেপসি এবং অন্যজন কোকাকোলা পছন্দ করি। আমরা সবসময় একইসঙ্গে ক্ষুধার্ত হই না। এমনকি আমাদের দুজনের পছন্দই ভিন্ন।

তাদেরকে দেখতে লোকসমাগমও ঘটে প্রচুর। ভারত এবং এর বাইরে থেকেও বিভিন্ন মানুষেরা তাদেরকে দেখতে আসেন। এ বিষয়ে শিবরাম বলেন, আমাদেরকে যারা দেখতে আসেন তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আর বিশ্বের প্রায় সবাই জানেন আমাদের সম্পর্কে। এজন্য আমাদের গর্বেরও শেষ নেই। কারণ আমরা সংযুক্ত হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছি। ২০১৬ সালে স্কুল থেকেও তাদের বের করে দেয়া হয়। এতে না-কি অন্যান্য ছাত্রদের সমস্যা হয়। শিবনাথ বলেন, আমরা যখন স্কুলে যেতাম, সব ছাত্ররাই আমাদেরকে ভিন্ন চোখে দেখত। মাঝে মাঝে গোটা এলাকার লোকেরাও আমাদের দেখতে স্কুলের আশপাশে জড়ো হতো। আর এ কারণেই স্কুলে যেতে আমাদের মানা।

৫০ বছর বয়সী পিতা রাজকুমার ও তার স্ত্রী মতি দেবীর এই জমজ দুই ছেলে ছাড়াও ছয় কন্যা রয়েছে। কন্যারা সবাই বিবাহিত। পিতা তার জমজ ছেলেদের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান। তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় এজন্য আলাদা করতেও রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি চায়নি তারা আলাদা হোক। আমার ছেলেরা সুস্থ আছে এবং আমি তাদের যেমন আছে তেমনি গ্রহণ করে নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের গ্রামের প্রত্যেকেই তাদের ভালবাসে এবং তাদের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করে। যেহেতু তারা আর স্কুলে যায় না তারা নিজেদের মধ্যে খেলা করে। এই বৃদ্ধ পিতা আক্ষেপ করে বলেন, সরকারের কাছ থেকে সাহায্যের আশায় অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষই আমাদের কথায় কান দেয়নি। তাদের দেখাশুনার ভার আমার উপরই বর্তায়। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। শিবনাথ ও শিবরাম ঠিক সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে। এরপর কিছুক্ষণ এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। আবার তারা বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও মুভিও দেখেন। শিবনাথ বলেন, আমরা শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় কেউ আমাদের কোনো কাজই দেননা। আমাদের এক একর জমি আছে। সেটিই সমানভাবে ভাগ করে কৃষকদের কাছে ইজারা দেবো বলে ভাবছি।

যৌগিক যমজ দেখা দেয়, যখন যৌন প্রজনন দ্বারা গঠিত প্রাথমিক কোষ জাইগোট সম্পূর্ণ পৃথক হতে ব্যর্থ হয়। এগুলো প্রতি ৫০ হাজার জন্মের মধ্যে মাত্র একটিতে ঘটে থাকে।

সূত্র: মেট্রো

Exit mobile version