চাঁপাইবাবগঞ্জে তরমুজ চাষিদের আইডল শফিকুল ইসলাম/

260

কৃষি কাজ করে অনেকে বাড়ি-গাড়ি করছেন। এমন খবর প্রায়ই দেখা যায় গণমাধ্যমে। সেগুলো দেখেই উৎসাহিত হয়ে ব্যবসা ছেড়ে কৃষি কাজে যুক্ত হন গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের চাড়ালডাঙ্গা গ্রামের শফিকুল ইসলাম। প্রায় ১৫ বছর কাপড়ের ব্যবসা করেছেন। তবে তা থেকে বড় কিছু করতে পারেন নি। তিনি স্বপ্ন দেখছেন কৃষি কাজ করে জীবনে কিছু একটা করবেন। নিজের সেই রকম জমিও নেই, তবুও তার প্রবল ইচ্ছা। তাই অনের জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ শুরু করেন। কিন্তু ধানের যে দাম তাতে জমি চাষে যে টাকা খরচ হয় তা উঠানোই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বিকল্প পথ বেছে নেন। অন্য কোন ফসল করা যায় কিনা এমন ভাবনা থেকে পরিচিত হন বারমাসি তরমুজ চাষের বিষয়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটিতে বানিজ্যিক ভাবে তরমুজের চাষ হবে। আর সেটা থেকে লাভবান হওয়াও যাবে। এমনটা ভাবা তো দুরের কথা, তরমুজের চারা লাগিয়ে তা থেকে তরমুজ ধরবে এমনটাই অনেকে ভাবনাতে আনেন না। তবুও সেই ভাবনাকে বাস্তবে রুপ দেন শফিকুল ইসলাম। ২০শতক জমিতে লাগান তরমুজের বীজ। তাবে এতে প্রতিবেশিদের অনেকেই তাকে তাচ্ছিলের চোখে দেখেন।

যদিও তিনি নিজেও প্রথম দিকে ছিলেন দিধা দন্দের মধ্যে। নানা জনের নানান কথায় কান না দিয়ে তিনি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেবি তরমুজ(হাইব্রিড এফ-ওয়ান) এর বীজ রোপন করেন। আর এই কাজে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহায়তায় প্রয়াসের বাস্তবায়নে রফিকুল ইসলামকে বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সহায়তা দেয়া হয়।

এক মাসের মধ্যেই তরমুজের গাছে ফুল আসে। গাছে ফুল দেখতে পেয়ে শফিকুলের মনেও আশার ফুল ফোটে। না! তিনি তরমুজ চাষ করতে পারবেন। গত মাসের ২০জুন থেকে বাজারে তরমুজ বিক্রি শুরু করেন। সেই তরমুজ বিক্রি করে এবার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভবান হতে পারবেন বলে জানান শফিকুল ইসলাম।

শফিকুল ইসলাম জানান, তার মনে একটা বিশ্বাস তৈরী হয়েছে। ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে যে পরিমান না লাভ করতে পারবেন। তিনি ১০ কাঠা জমিতে তরমুজ চাষ করে তার চেয়ে বেশি লাভ করতে পারবেন। যদি ফলন এবারের মত আসে।

তিনি আরো জানান, প্রথমে তিনি নিজেও বিশ্বাস করতে পারেন নি যে, তিনি নিজে তরমুজের চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। যার কারণে প্রথম দিকে গাছের পরিচর্যা নিতে অবহেলা করেছেন। তবে গাছে ফুল আসার পর থেকে পরিচর্যা নিতে শুরু করেন। প্রথমবার চাষাবাদ করায় একটু সমস্যা হয়েছে। পুরো জমিতে তিনি মালচিং পেপার ব্যবহার করেন নি। যে টুকুতে মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন সেই টুকুতে ফলন ভাল হয়েছে। তিনি আশা করছেন, সঠিক ভাবে পরিচর্যা নিতে পারলে আরো বেশি লাভবান হতে পারতেন। তাই এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী বছর আরো বেশি পরিমানে তরমুজের চাষাবাদ করবেন এমনটা পরিকল্পনা করছেন। তাকে প্রয়াসের কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ করিম ও পিএ টেকনিক্যাল রুহুল আমিন তরমুজ চাষের পরামর্শ ও সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে শফিকুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জে তরমুজ চাষীদের কাছে আইডল হতে চলেছেন। তাকে দেখেই তার প্রতিবেশি আত্তাব আলী ৫কাঠা জমিতে নতুন ভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। এখনো অনেক চাষী তাকে দেখে তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী।

বেবি তরমুজের বাইরের বং কালচে। তবে ভিতরের অংশ পাকলে লাল রংয়ের। খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু। পূর্ণ বয়স্ক বেবি তরমুজ ২.৫ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়। ১টি গাছে ৪ থেকে ৬টি পর্যন্ত তরমুজ ধরে। তবে একটি গাছে ৩ থেকে ৪টি তরমুজ রাখায় উত্তম।

শফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্য ৫জন। স্ত্রীসহ ২ মেয়ে ১ ছেলে নিয়ে তার সংসার। তার স্বপ্ন কৃষি কাজ করেই সংসারের উন্নতি করবেন এবং ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মত মানুষ করবেন। তাদের বড় মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীতে লেখাপড়া করছেন। তবে ছোট ছেলে ও মেয়ের বয়স না হওয়ায় এখনো স্কুলে ভর্তি করান নি।

চাড়ালডাঙ্গা মোড় থেকে উত্তর দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে রাস্তার বাম পাশে শফিকুল ইসলামের তরমুজের ক্ষেতটি। জামিতে গিয়ে দেখা যায় কালো রংয়ের অনেক তরমুজ ঝুলে রয়েছে। শফিকুল ইসলামের প্রতিবেশি এরফান আলী ও এনামুল হক জানান, প্রথমে যখন শফিকুল তরমুজে গাছ লাগাইলো তখন আমরা বলছিলাম। সে কি করতে গেল। হাতে ধইর‌্যা টাকা নষ্ট করতে গেল। কিন্তু যখন ফলন আসল তখন আমরাই পস্তাই। আমাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না যে, আমাদের একাকায় তরমুজের এতো ফলন হয়। এখন মনে হইছে আমরাও না করে ভুল করেছি। তবে আগামী বছরে তারাও তরমুজ চাষ করবেন বলে জানান।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এর আগে রহনপুরে এক চাষী তরমুজ চাষ করলেও তিনি শফিকুলের মত সফল হতে পারেন নি।

তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে বেশ কিছু আগ্রহী চাষী শফিকুল ইসলামের জমি পরিদর্শন করেছেন। আমরাও চাই ধান চাষের পাশাপাশি এই ধরনের চাষে চাষীরা এগিয়ে আসুক। কারণ ধান চাষে পরিশ্রম বেশি, খরচ বেশি কিন্তু লাভ কম। কিন্তু তরমুজ চাষে পরিশ্রম কম লাভ বেশি। আমরা আগামী বছর এই জাতের তরমুজ প্রদর্শনী আকারে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে করতে চাই। যাতে এটি চাষে চাষিরা আরো বেশি এগিয়ে আসে।

কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন আরো জানান, পূর্নভবা নদীর পানিতে কিছুটা পলি মাটি থাকে যার কারণে এই এলাকার মাটি বেশ উর্বর। রাধানগরে এবাই প্রথম তরমুজের চাষ হল। এই এলাকায় তরমুজ চাষের একটা ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ধান চাষের পাশাপাশি এই ধরনের চাষে যারা এগিয়ে আসছেন তাদের আমরা উৎসাহিত করছি।