চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে থেকে অন্ত:সত্তা সোনালী সহ ৬ ভারতীয় জামিন লাভের পর; পূনরায় পুলিশ হেফাজতে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা ৯ মাসের অন্ত:সত্তা সোনালী বেগম সহ ৬ ভারতীয় নাগরিক জামিন লাভের পর কারাগার থেকে বের হয়ে জিম্মাদারের বাড়ি পৌঁছার পর পূণরায় তাঁদের নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছে জেলা পুলিশ। আজ দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে সদ্য যোগদানকৃত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ওই ৬ জনের ব্যাপারে উপর মহলের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং জিম্মদার ও তাঁর নিযুক্ত আইনজীবীর সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর আগে গতকাল দুপুর ১টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আশরাফুল ইসলাম শিশু, নারী সহ ওই ৬ ভারতীয় নাগরিকের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছার পর রাত পৌনে ৮টার দিকে ওই ৬ জনকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেন জেল সুপার আমজাদ হোসেন। এর আগে গত ২০ আগষ্ট ওই ৬ জনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আলীনগর মহল্লার একটি বাড়ি থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ও অবস্থানের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ২১ আগষ্ট সদর থানায় তাদের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সালের দি কন্ট্রোল অফ এন্ট্রি আ্যক্ট এর ৪ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে হাজতে পাঠানো হয়।
ওই ৬ ভারতীয় নাগরিক হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার পাইকড় থানার পাইকড় গ্রামের মন্নু শেখের ছেলে মো.দানেশ, তার স্ত্রী সোনালী বেগম ও তাদের ছেলে মো. সাব্বির, পাশের মুরাডাই থানার ঘিতোরা গ্রামের আজিজুল দেওয়ানের স্ত্রী সুইটি বিবি এবং তার দুই ছেলে কুরবান দেওয়ান ও ইমাম দেওয়ান।
গত ২০ আগষ্ট গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসবাদের পর পুলিশ জানায়, আটকরা বীরভুমের দুটি পরিবার। তাঁরা বাঙ্গালী। দিল্লিতে তারা ইটভাটায় কাজ করতেন। গত ২৪ জুন দিল্লীর ক্যানজোড় ১১ সেক্টরের কালীমাতা থানা পুলিশ শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার কারণে তাঁদের বাংলাদেশী সন্দেহে আটক করে। পরে একই কারণে আধার কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্তেও ২৬ জুলাই বিএসএফ তাঁদের কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে পুশইন করে। এরপর তাঁরা ঢাকায় চলে যায়। পরে তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসে বসবাস শুরু করেন।

এদিকে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ওই ৬ নাগরিক কারাগারে যাবার পর বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের বিভিন্ন মহলে নানা রকম আলোচনা শুরু হয়। অন্তত: মানবিক কারণে হলেও সোনালীর অন্ত:সত্তা অবস্থা এবং অন্য শিশু ও নারীদের কথা চিন্তা করে ৬ ভারতীয়র বিষয়টি নিস্পত্তির কথা ওঠে।
এ অবস্থায় গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নয়াগোলা গাইনপাড়া মহল্লার মৃত রহমত আলীর ছেলে ফারুক হোসেন আদালতে ওই ৬ জনের জামিন আবেদন করলে মূলত: সোনালীর অন্ত:সত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আদালত ৬ জনকে ফারুকের জিম্মায় তাঁর বাড়িতে অবস্থান, মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সময়মত আদালতে হাজির করা সহ কয়েকটি শর্তে জামিন দেন। আগামী ৩ ডিসেম্বর তাদের আবার আদালতে হাজির হবার তারিখ ধার্য্য হয়। ফারুকের পূর্ব পুরুষের বাড়ি ভারতে সোনালীদের বাড়ির এলাকায়। তারা পরস্পর বংশীয় আত্মীয়।

ফারুক হোসেন বলেন, গতকাল কারাগার থেকে ছাড়া পাবার পর রাত ৯টার দিকে ৬ জনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়ানোর পরপরই রাত ১০টার দিকে আবার তাদের সদর থানায় নেয়া হয়। ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ তাকে জানিয়েছে। এদিকে ভারতে বিষয়টি আলোচিত হবার পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসভার সদস্য সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ সোনালীদের ভারতে ফেরৎ নেয়ার জন্য কাজ করছেন। গতকাল তিনি জেলগেটে উপস্থিত ছিলেন। ফারুক আরও বলেন, বিষয়টির নিস্পতির সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জড়িত।