চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

97

পঁচিশ মার্চ কালরাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তান বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা তারা পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে তারা এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন।
শনিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসন আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। আলোচনায় অংশ নেনÑ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসি, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবুল কালাম সাহিদ, সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর কুমার কুণ্ডু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, দৈনিক চাঁপাই দৃষ্টির সম্পাদক এমরান ফারুক মাসুম, গ্রিন ভিউ স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নূর আয়েশা সিদ্দিকা ও হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তাহমিদ ইসলাম।
বক্তারা শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেনÑ তোমরা গুগলনির্ভর না হয়ে বইনির্ভর হবে, তা না হলে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তোমরা জানতে পারবে না। স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা উল্লেখ করে বক্তারা বলেনÑ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি বিল পাস করে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেন খন্দকার মোস্তাক ও জিয়াউর রহমান। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে ফেলেন। একটা সময় পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছিল না। ফলে সেই সময় যারা শিক্ষার্থী ছিল, তারা বঞ্চিত হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আজকের শিশুরাই হবে মূল কারিগর, তাই তাদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনিছুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পাপিয়া সুলতানা, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রওশন আলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
পরে বাদ মাগরিব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয় এবং রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি পালন করা হয়।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকালে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াতের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেনÑ সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুবায়ের হোসেন, শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুকমল চন্দ্র নাথ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বজলুর রশিদ সনু ও আলাবক্স মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান।
সভায় বক্তারা বলেন, বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিনি কনফারেন্স রুমে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিথিলা দাস, নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ মিন্টু রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচও ডা. সুলতানা পাপিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, কৃষি অফিসার বুলবুল আহম্মেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ।
এছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা ২৫ মার্চ রাতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।