চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনার পর পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৯

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্ভূত সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ, পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট, পুলিশের ওপর হামলা এবং সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে এই মামলা করা হয়।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাকিল হোসেন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ১৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসিম ফিরোজ শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে শহরের সার্কিট হাউস মোড়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর মহাসড়কে পুলিশের সংকেত অমান্য করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে একই মোটরসাইকেলে থাকা দুই তরুণ নিহত হন। নিহতরা হলেন পোলাডাঙ্গা জোড়বাগান এলাকার শাহ আলমের ছেলে রিফাত (১৮) এবং চাঁদলাই জোড়বাগান এলাকার আশরাফুল ইসলামের ছেলে সোহাগ (১৭)।
দুর্ঘটনার পর পুলিশের কারণে ঘটনা ঘটেছে—এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষুব্ধ জনতা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আধা কিলোমিটার দূরের বিশ্বরোড মোড়ে অবস্থিত দুইতলা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। এতে বক্সের ভেতরে থাকা একটি পুলিশ মোটরসাইকেল ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
এছাড়া সড়কে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ সৃষ্টি করা হয়, যার ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে সদর থানা পুলিশ ফাঁড়ি, ফাঁড়ির ভেতরে থাকা পুলিশ অফিসার্স মেস ও আরেকটি পুলিশ মোটরসাইকেলে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর প্রায় ছয় ঘণ্টা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ ছিল এবং সদর থানার প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসিম ফিরোজ আরও জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর রাতেই তা নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনায় পুলিশের কেউ আহত না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুযোগসন্ধানী একটি ‘তৃতীয় পক্ষ’ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। তাদের ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে জেলা পুলিশ উচ্চপর্যায়ের তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।